বাজি বানানো। নিজস্ব চিত্র
শব্দবাজি চান? বাজির দাম আর গাড়ি ভাড়া পাঠিয়ে ফোন করলেই বাড়ির দরজায় পৌঁছে দেবেন ‘ডেলিভারি ম্যান’।
কালীপুজোর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই পুলিশের চোখ এড়িয়ে বর্ধমান শহরে চলছে নিষিদ্ধ বাজির কারবার। ফুড-অ্যাপের মাধ্যমে রেস্তরাঁ থেকে খাবার আনানোর মতোই মোটরবাইকে পৌঁছে যাচ্ছে শব্দবাজি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই দাবি, রংমশাল, ফুলঝুরি, চরকি-তুবড়ির মতো আতসবাজির রঙবেরঙের প্যাকেটের নীচে থাকছে কালীপটকা, দোদোমা, চকোলেট বোমা। আবার আর একটু বেশি খরচা করলে মিলছে ‘দড়ি-বোমা’, ‘পাইপ বোমা’ও। বাজির কারিগরদের দাবি, পাইপের ভিতর দু’দিকে বারুদ ভরে সলতে দেওয়া থাকে। আগুন দিলেই কানফাটানো আওয়াজ তার।
পূর্ব বর্ধমানে মেমারি, খণ্ডঘোষের মতো একাধিক জায়গায় বাজি তৈরির কারখানা রয়েছে। মূলত আতসবাজি তৈরি হয় সেখানে। বিশেষত, আলোর নানা বাজি দিয়ে তৈরি ‘কদম গাছে’র চাহিদা থাকে পুজো মরসুম জুড়ে। কিন্তু দুর্গাপুজোর পর থেকেই আড়ালে-আবডালে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি হতে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই সব কারখানার বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নেই। ফলে, লুকিয়েচুরিয়ে ব্যবসা চলে। বাজি প্রস্তুতকারকদের দাবি, পুলিশের নজর এড়াতেই এ বার বাড়ি বাড়ি বাজি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, ‘ডেলিভারি ম্যান’ বা এজেন্টদের মোটরবাইক দেওয়া হয়েছে। বরাত নেওয়া থেকে সরবরাহ পুরোটাই করেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজি প্রস্তুতকারক বলেন, ‘‘আমরা সরাসরি কোনও খরিদ্দারের কাছে শব্দবাজি পাঠাই না। ফোনে বরাত মিললে এজেন্ট গিয়ে জায়গাটা রেইকি করে আসেন। বরাতের টাকা ও গাড়ি ভাড়া পেলে তবেই বাজি পাঠানো হয়।’’
তাঁদের দাবি, এক একটি মোটরবাইকে তিন জন করে থাকেন। দু’জনের কাছে বরাত পাওয়া জিনিসপত্র থাকে। আর এক জন মোটরবাইক চালান। পুলিশের ‘গন্ধ’ পেলেই অন্য রাস্তা ধরে ফেলেন তাঁরা। ফলে, ‘ডেলিভারি ম্যান’ হতে গেলে শহরের অলি-গলি চেনাটাও খুবই জরুরি। জানা গিয়েছে, এই জেলা ছাড়িয়ে আসানসোল, দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে ‘ডেলিভারি ম্যান’। তাঁরা জানান, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দুই চব্বিশ পরগনা থেকে ও দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়া থেকেও কালীপুজোর দু’দিন আগে প্রচুর শব্দবাজি জেলায় ঢোকে।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাষ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিষিদ্ধ বাজি ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিনশো কেজি শব্দবাজি উদ্ধার হয়েছে।’’ বুধবার রাতেই বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজার, রানিগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন দোকানের গুদামে হানা দিয়ে ২৮ কেজির মতো নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এর আগে লাকুর্ডি, নীলপুর এলাকায় হানা দিয়ে ৫২ কেজি বাজি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার জেলা বম্ব স্কোয়াড ওই বাজিগুলি নষ্ট করে। গত রবিবারও একটি গাড়ি থেকে সতেরোশো প্যাকেট আতসবাজি ও পাঁচশো প্যাকেট চকোলেট বোমা উদ্ধার করে কালনা থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় শেখ আলিম আলি নামে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের এক জনকে। তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন।