বাড়ি থেকে বেরোতেই রাস্তার জলে পা। নিজস্ব চিত্র।
তীব্র গরমে ঘেমেনেয়ে একাকার দশা থেকে সবে আকাশের চেহারা বদলেছে। কখনও ঝমঝমিয়ে, কখনও দিনভর বৃষ্টিতে স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু তার মাঝেই কপালে ভাঁজ কাটোয়াবাসীর। অল্পেই জমা জল দেখে গত বছরের বন্যার স্মৃতি মনে পড়ছে তাঁদের। যদিও মহকুমা প্রশাসনের দাবি, এ বার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
দিন কয়েকের বৃষ্টিতে কাটোয়া শহর জুড়ে বর্ষার চেনা ছবিটাই ফিরে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটু বৃষ্টিতেই খানাখন্দে ভরেছে রাস্তা, জলে ডুবে গিয়েছে শহরের বিভিন্ন গলি। বেশ কিছু এলাকায় বাড়িতেও জল ঢুকে পড়ছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরাই জানান, শুধু কাটোয়া শহর নয়, কাটোয়া ২ ব্লক, কেতুগ্রামের বিভিন্ন গ্রামও জলমগ্ন হয়ে পড়ে প্রতি বর্ষায়।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রেও জানা যায়, কাটোয়ার বেশিরভাগ অংশই বেশ নিচু। ফলে বর্ষাকালে অজয়ের জলস্তর বাড়লেই বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকে যায়। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেই জল বের হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল পাল, সুদেব ধাড়াদের অভিযোগ, গত বছর বন্যার পরে শহরের জমা জল বের করার জন্য সাংসদ সুনীল মণ্ডল একটি পাম্পের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরলেও তা হয়নি। অজয়ের বাঁধের উপরে গাছ কেটে বহু মানুষ বাড়ি তৈরি করে থাকছেন। তার জেরে ক্ষতি হচ্ছে বাঁধের। কিন্তু সব জেনেও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই এ বছর ফের বন্যা হলে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় কাটোয়াবাসী।
মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরও কাটোয়া মহকুমা জুড়ে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগে থেকেই বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ব্লক অফিসগুলিকে ২০ কুইন্ট্যাল করে চাল দেওয়ার পরেও মহকুমায় ৫০ কুইন্ট্যাল চাল মজুত রাখা হয়েছে। ৩০০০ ত্রিপল ও বন্যা দুর্গতদের জন্য মহকুমায় ১২৭টি শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও কেরোসিন, শিশুদের খাওয়ার, মুড়ি, চিঁড়ের জন্য আড়তদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত বালির বস্তা মজুদ রাখার জন্যও সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক শুভজিৎ সিংহ। তিনি জানান, বন্যায় উদ্ধারকাজের জন্য কয়েক দিন আগেই বর্ধমান অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ জন ডুবুরির মহড়া হয়েছে কাটোয়া ঘুটকিয়াপাড়া ঘাটে।
মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার জানান, মহকুমায় একটি ‘সেফটি বোট’ রয়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতিতে স্থানীয় নৌকা ভাড়া করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাছাড়া, সেচ দফতর থেকে দু’টি বিদ্যুতচালিত ও দু’টি ডিজেলচালিত পাম্প দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।