খাবার দেখছেন সিএমওএইচ। নিজস্ব চিত্র।
নীল পোশাক পরে তিন জন কর্মী ট্রলিতে করে রোগীদের জন্য খাবার নিয়ে সবে ঢুকেছিলেন ওয়ার্ডে। শুরুতেই ধাক্কা। ঢাকনা খুলে খাবারের মান নিয়ে ভর্ৎসনা করলেন স্বয়ং মুখ্য সাস্থ্য অধিকর্তা। শুক্রবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা।
এ দিন মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (সিএমওএইচ) প্রণব রায় হাসপাতালের পুরুষ বিভাগ পরিদর্শন করছিলেন। সেই সময়েই থালা সাজিয়ে ঢুকছিলেন খাবার সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাসংস্থার কর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাবারের ঢাকনা খুলেই জলের মতো ডাল দেখে চমকে যান প্রণববাবু। ক্ষুব্ধ প্রণববাবু ওই কর্মীদের লক্ষ করে বলেন, ‘‘এ রকম খাবার রোগীদের দেন কী ভাবে! নিজেরা খেতে পারবেন?’’
অবশ্য খাবারের মান নিয়ে সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে সুপার খাবারের মান দেখে কর্মীদের বের করে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে দেন। অথচ স্বাস্থ্য দফতর জানায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দিনে তিন বার পরিমিত সুষম খাবার দিতে হবে। খাদ্য তালিকা অনুসারে, ফি দিন সকালে ৫০ গ্রাম পাঁউরুটি, ২৫০ মিলিলিটার দুধ, একটি ১১০ গ্রামের কলা ও একটি ডিম দেওয়ার কথা। দুপুরে খাবারের তালিকায় ৪০০ গ্রাম ভাত, ১০০ গ্রাম ডাল, সব্জি ও ৫০ গ্রাম মাছ অথবা মাংস থাকতে হবে। রাতে থাকবে একই পরিমাণ ভাত, ডাল, সব্জি ও ডিম।
তবে নিয়ম থাকলেও সুষম খাবার দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রোগীদের। হাসপাতালে ভর্তি খাঁজির এলাকার সামসুল শেখ, সালারের সাইন শেখদের অভিযোগ, ‘‘ভাতে কাঁকর থাকে। তরকারিও মুখে তোলা যায় না। মাছও থাকে নামমাত্র।’’ এই পরিস্থিতিতে অনেককেই বাড়ির খাবার খেতে হয় বলে জানান রোগীরা।
প্রসঙ্গত মাসখানেক আগেই অপর্যাপ্ত ও অপিরিমিত খাবার দেওয়া নিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সিএমওএইচ-এর কাছে অভিযোগ করেন রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য শ্যামল ঠাকুর। এ দিন তিনি জানান, গত ৩১ জানুয়ারি মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার শিবাপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায় এক সপ্তাহের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শুক্রবার শিবাপ্রসাদবাবুর দাবি, ‘‘খাবারের মান ঠিকই আছে।’’ যদিও প্রণববাবু বলেছেন, ‘‘ওই ঠিকাদারকে শো-কজ করা হবে।’’ হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়াতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।