রসিকপুরে নর্দমার হাল এখনও এমনই। নিজস্ব চিত্র।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় বর্ধমান পুরসভার ভূমিকায় ‘হতাশ’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সপ্তাহ খানেক আগে রসিকপুরে একসঙ্গে তিনজনের ডেঙ্গি ধরা পড়তেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর পুরসভাকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। পুরসভা তখনই মাঠে নামলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না। এখন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ‘মাথা ব্যথা’ রসিকপুরে থাকা বর্ধমানের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। প্রত্যেক বন্দির নিয়মিত জ্বর ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শহরেরই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা সেখানে গিয়ে বন্দিদের পরীক্ষা করবেন।
ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “রসিকপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রায় সাতশো বন্দি রয়েছেন। একজনেরও ডেঙ্গি ধরা পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যেতে পারে। এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া শুরু হচ্ছে।”
গত ২৩ জুলাই রসিকপুরে প্রথমে তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় একুশে। স্বাস্থ্য দফতর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা এলাকায় গিয়ে দেখেছেন, প্রতিটি বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের অনেকেই ডেঙ্গি পরীক্ষা করাতে নারাজ। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়ে খোঁজও নেননি বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গির তথ্য সংগ্রহ করছেন না। পুরসভাকে ২৪ জুলাই চিঠি দিয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, জানানোর পরেও তারা রাস্তায় নামেনি। পুরসভাকে ওই দিন থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঠে নামিয়ে তথ্য সংগ্রহ, ফিভার ক্লিনিক, সাফাই-অভিযান, মেডিক্যাল ক্যাম্প করার জন্য বলা হয়েছিল, দাবি তাঁদের।
এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, “চিঠি পাওয়ার পরেই পুরসভা ব্যবস্থা নিলে রসিকপুরে এই অবস্থা হত না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্য ও নগরোন্নয়ন দফতরকে চিঠি দিই।” স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ওই চিঠিতে জানানো হয়, রসিকপুরের চারদিকে আবর্জনা পড়ে রয়েছে। ফাঁকা জায়গায় জল জমছে। মশার লার্ভা রয়েছে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। মশা মারার কামান, কীটনাশক দেওয়ার কথা বললেও পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর তাতে সাড়া দেননি বলে অভিযোগ। পরে কথা হয় উর্ধ্বতনদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরোন্নয়ন দফতর ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথভাবে বর্ধমান পুরসভাকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। নগরোন্নয়ন দফতরের উপ-সচিব জলি চৌধুরী ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকায় ক্ষোভ উগড়ে দেন। আবর্জনা সংগ্রহ, নিকাশি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহে পুরসভার ভূমিকা ‘সন্তোষজনক’ নয় বলে জানিয়ে দেন। বৈঠকে হাজির ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কর্মীরা নানা ‘অজুহাত’ দিলেও চুপ ছিলেন চেয়ারম্যান-ইন কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) সুশান্ত প্রামাণিক। রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় এ সপ্তাহে ৪৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা জেলায় মোট ১৪৯ জনের মধ্যে বর্ধমান শহরে ২৩ জন, কালনা ১ ব্লকে ২০ জন, মেমারি ১ ও পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ১৩ জন করে এবং দাঁইহাট পুরসভার এক জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, “ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কর্মীরা যোগ্য কি না তা দেখার জন্য শুক্র ও মঙ্গলবার পরীক্ষা হবে। যাঁরা যোগ্য তাঁদেরই রাখার নির্দেশ রয়েছে। নজরদারি কমিটিও গড়া হবে।’’