এইচআইভি পরীক্ষায় চার শিবির

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ১,৭০,৯৯৭ জন রক্ত পরীক্ষা করেছিলেন। পরের বছর ২,১৩,৩৮৫ জন রক্ত পরীক্ষা করান। আর এ বছর ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১,২৪,৯৪৭ জন পরীক্ষা করিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

যৌনপল্লি থেকে ইটভাটা, বছরভর নানা জায়গায় সচেতনতা প্রচার চালায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার পরেও এড্‌স নিয়ে সচেতনতায় ‘ফাঁক’ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর (পূর্ব)। সে কারণেই এই রোগে কলেজ পড়ুয়ারাও আক্রান্ত হচ্ছে বলে দাবি দফতরের আধিকারিকদের। তাই আজ, রবিবার বিশ্ব এড্‌স দিবসে জেলার চার জায়গায় শিবির করে পথচলতি মানুষজনকে এইচআইভি পরীক্ষার জন্য আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গোটা জেলায় প্রায় ২১০০ এইচআইভি আক্রান্ত রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে এড্স আক্রান্ত। এইচআইভি আক্রান্তের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে তলানিতে চলে গেলে এড্‌স আক্রান্ত বলা হয়। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকজন এড্‌স আক্রান্তের মৃত্যুও হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে জেলায় ২১৯ জন এইচআইভি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। পরের বছরে পাওয়া যায় ২৪৪ জনের। এ বছরর ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সেই সংখ্যা ১৮৩। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “গত বছরের চেয়েও এ বার এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি পাওয়া যাবে বলেই মনে করছি।’’

কেন ঠেকানো যাচ্ছে না এই রোগ? বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, এখনও মানুষের মধ্যে ভাল ভাবে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়নি। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, এইচআইভি-তে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে অসুরক্ষিত যৌন মিলনই কারণ। কিন্তু দাড়ি কাটা বা সুচ ও সিরিঞ্জের মাধ্যমেও যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, অনেকের সেই ধারণা নেই। সংক্রামিত মা থেকে গর্ভস্থ শিশুর দেহেও এইচআইভি ছড়ায়, সেটাও অনেকে মানতে চান না। স্বাস্থ্য-আধিকারিকেরা জানান, ক্রমাগত প্রচারের ফলে সচেতনতা অনেকটাই গড়ে উঠেছে। তবে আরও সচেতনতা প্রয়োজন।

Advertisement

স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, তুলনামূলক ভাবে কমবয়সিদের মধ্যে এইআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এই তথ্যে তাঁরা আতঙ্কিত। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানোর ব্যাপারেও অনেকের অনীহা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা জানান, কয়েক বছর আগেও দূরপাল্লার ট্রাক চালকদের নিয়মিত ভাবে রক্তপরীক্ষা করানো হত। এখন আর সে ভাবে তা হয় না। ফলে, একটা ফাঁক দেখা দিচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ১,৭০,৯৯৭ জন রক্ত পরীক্ষা করেছিলেন। পরের বছর ২,১৩,৩৮৫ জন রক্ত পরীক্ষা করান। আর এ বছর ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১,২৪,৯৪৭ জন পরীক্ষা করিয়েছেন। এক আধিকারিকের কথায়, “এ বছর রক্ত পরীক্ষার সংখ্যাটা আড়াই লক্ষের কাছাকাছি হবে। জেলার জনসংখ্যার নিরিখে যা ২ শতাংশের মতো। অর্থাৎ, অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করানো নিয়ে সচেতন হচ্ছেন না। কেউ শরীরে রোগ লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন কি না, সেটাই আমাদের চিন্তা।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা জানান, পালিতপুরের স্পঞ্জ কারখানার মতো বেশ কিছু ছোট শিল্প-এলাকায় তাঁদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন কারখানার আধিকারিকেরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।

ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “জোর করে কিছু করা যাবে না। মানুষকে বুঝিয়ে বাধা পেরোতে হবে। সে জন্যই বর্ধমান স্টেশন, মেমারি স্টেশন, কাটোয়া ও কালনা বাসস্ট্যান্ডে কিয়স্ক বসানো হচ্ছে। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হবে। সেটুকুও সময় না থাকলে মোবাইল নম্বর নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement