—প্রতীকী ছবি।
বছর তিনেক আগে বর্ধমান স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হল জিআরপি। ফলে মামলার চার্জ গঠন হল না। অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা ফিরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার বর্ধমানের সিজেএম চন্দা হাসমত এই নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ২২ জুন আপ হাওড়া-মোকামা এক্সপ্রেসের দুই যাত্রী সুমিতকুমার বাজাজ ও অশোক রাজপথকে গ্রেফতার করে জিআরপি। ট্রেনটি বর্ধমান স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছলে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের কাছে থাকা দু’টি ব্যাগ থেকে ২ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন ধরণের সোনার গয়না উদ্ধার হয়। বৈধ নথিপত্র দেখাতে না পারায় গয়নাগুলি জিআরপি বাজেয়াপ্ত করে। সাব-ইনসপেক্টর অষ্টকুমার বেরার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৯, ৪১১ ও ৪১৪ ধারায় মামলা রুজু করে জিআরপি। পরে জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্তেরা। তদন্ত সম্পূর্ণ করে জিআরপি বিহারের পটনা দুই বাসিন্দার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১১, ৪১৪, ৪২৪ এবং বিসিএলএ আইনের ৪(১) ধারায় চার্জশিট পেশ করে জিআরপি। যদিও তদন্ত চলাকালীন দুই অভিযুক্ত জানান, তাঁরা স্বর্ণ ব্যবসায়ী। সোনার গয়না কিনে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। গয়নার কিছু কাগজপত্র ও জিএসটি বিল তাঁরা জমা দেন জিআরপির কাছে।
অভিযুক্তদের দুই আইনজীবী পার্থ হাটি ও মুন্সি আসাদুজ্জামান সিজেএম আদালতে আবেদন করেন, বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার বৈধ কাগজপত্র পেশ করা হয়েছে। তা ছাড়া বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার গয়না যে চুরির, এ ধরনের কোনও তথ্যপ্রমাণও আদালতে জিআরপি পেশ করতে পারেনি। যে সব সাক্ষীদের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে, সেখানে কোথাও চুরির কথা উল্লেখ নেই। বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা কেনা হয়েছে এবং এর বিল ও জিএসটির কাগজপত্র তদন্তকারী অফিসারের কাছে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এই মামলায় বিসিএলএ আইন প্রযোজ্য নয়। কারণ, বর্ধমান স্টেশন এলাকা শিল্পাঞ্চল নয়। গ্রেফতারের আগে ৪১এ সিআরপিসি ধারায় অভিযুক্তদের নোটিস দেওয়া হয়নি। সরকারি আইনজীবী অবশ্য মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে আদালতে দাবি করেন। তা ছাড়া অভিযুক্তেরা সোনার গয়নার বৈধ কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। দু’পক্ষের বয়ান শোনার পর সিজেএম চন্দা হাসমত অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যহতি দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে তিনি জানিয়েছেন, কেস ডায়েরিতে বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা যে চুরির, তার কোনও নথিপত্র নেই। তা ছাড়া ৪২৪ ধারায় চার্জ গঠনের মতো প্রামাণ্য নথি তদন্তকারী সংস্থা পেশ করতে পারেনি। সে কারণে অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হল বলে রায় দিয়েছেন সিজেএম।