কালনায় বিজেপির বিজয় মিছিল। নিজস্ব চিত্র
গত বিধানসভা ভোটে পূর্বস্থলী উত্তর আর জামালপুর, বর্ধমান পূর্ব আসনের মধ্যে তো বটেই, গোটা জেলায় এই দুই এলাকাতেই জিতেছিল বামেরা। কিন্তু এই লোকসভা ভোটে এই দুই এলাকাতেও এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দ্বিতীয় স্থানে এসেছে বিজেপি। কী ভাবে এমন ফল, তা নিয়ে দুই এলাকাতেই শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া।
লোকসভায় পূর্বস্থলী উত্তর ও জামালপুর, এই দুই এলাকায় তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে ৮৫,১৭৪ ও ৮১,৯৪১। বিজেপির ভোট যথাক্রমে ৮২,৪৬৯ ও ৭৮,২৫৭। সেখানে সিপিএম বিধানসভায় জেতা তাদের দুই আসনে পেয়েছে যথাক্রমে ২৬,৭৬৩ এবং ২৬,০০৭টি ভোট। এই ফলাফল সামনে আসার পরেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-র লোকসভার তুলনায় এ বার তৃণমূলের ভোট বৃদ্ধি হলেও, তা খুবই কম। উল্টো দিকে, সিপিএমের ভোট কমেছে অনেকটাই। ব্যাপক বেড়েছে বিজেপির ভোট।
কেন এই ফল? সিপিএম নেতাদের ব্যাখ্যা, প্রথমত, তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে না পারা। দ্বিতীয়ত, প্রচারে বেশ কিছু খামতি থেকে যাওয়া। প্রথম কারণটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জামালপুরের সিপিএম বিধায়ক সমর হাজরা বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ সে ভাবে আশ্রয় পাচ্ছিলেন না আমাদের কাছে। তাঁরা বিকল্প খুঁজছিলেন।’’ এই দুই এলাকায় সিপিএম ছোট ছোট মিটিং, মিছিল, বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দেয়। কিন্তু কোনও ‘হেভিওয়েট’ নেতা এনে বড় মাপের সভা হয়নি সিপিএমের। এই পরিস্থিতিতে সেটাও দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে কি না, তা নিয়েও অঙ্ক কষা চলছে সিপিএমের অন্দরে। এই লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করিনি তা নয়। তবে সেটা তেমন কাজে আসেনি। তৃণমূল বিরোধী হাওয়া ছিল প্রবল।’’ তবে সিপিএমের পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক প্রদীপ সাহার কথায়, ‘‘আমাদের মিটিং, মিছিলে হেঁটেছেন এমন লোকজনের অনেকের ভোটও আমরা পাইনি।’’ তবে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, বিধানসভায় এই ফল হবে না।
কিন্তু সিপিএমের প্রচার বা ওই দলের বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করতে পারাটাই তাঁদের সাফল্যের কারণ বলে মনে করছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, জামালপুরে তৃণমূলের কোন্দল রয়েছে। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপির দাবি, দুই জৌগ্রাম থেকে জামালপুরের রাস্তা-সহ নানা জায়গায় গেরুয়া পতাকা দেখা গিয়েছে এ বার। এমনকি, এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, কিছু জায়গায় পদ্মের পতাকা দেখা গেলেও ঘাসফুল তেমন দেখাও যায়নি। পূর্বস্থলী উত্তরে এলাকায় নদী ভাঙন, রুগ্ণ তাঁতশিল্পের মতো নানা সমস্যা এনডিএ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারই মেটাতে পারে, দলের এমন প্রচারও তাঁদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বলে মত বিজেপি নেতৃত্বের।
যদিও তৃণমূলের জেলা নেতা উত্তম সেনগুপ্ত এই ফল সম্পর্কে বলেন, ‘‘ফলাফলেই স্পষ্ট, সিপিএমের ভোট বিজেপি-তে গিয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডুর দাবি, ‘‘পরিকল্পনা করেই সিপিএম নেতারা তাঁদের ভোট বিজেপির দিকে ঠেলে দিয়েছে।’’ তবে সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর বিজেপির জেলা নেতা ধনঞ্জয় হালদারের দাবি, ‘‘শুধু সিপিএম নয়, আমরা তৃণমূলের একটি অংশেরও ভোট পেয়েছি। তাই এই ভোট-বৃদ্ধি।’’ বিজেপি নেতৃত্ব এ প্রসঙ্গে শুধুমাত্র জামালপুরের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝাতে চান। তাঁরা জানান, ২০১৪-র সঙ্গে এ বারের ফলের তুলনায় দেখা যাচ্ছে, এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপির ভোট বেড়েছে ৫৭ হাজারের কিছু বেশি। উল্টো দিকে, একই হিসেবে সিপিএমের ভোট কমেছে ৪৫ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ সব বাম-ভোট বিজেপির ঝুলিতে যদি এসেও থাকে, তার পরেও আরও প্রায় বারো হাজারের মতো ভোট হলে তবেই এ বারের বৃদ্ধি হয়। এই হিসেবকে সামনে রেখেই বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূল-সহ অন্য নানা দলের ভোটও তাঁরা পেয়েছেন।