প্রতীকী ছবি।
দু’বছর ধরে বারবার চিঠি পাঠিয়েছেন বিমা সংস্থায়। ছুটে গিয়েছেন জেলা কৃষি দফতরে। চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু ফসলের ব্যক্তিগত বিমা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত কয়েক দিন আগে জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বিমা সংস্থার আধিকারিককে ফোন করে গলসির পুরন্দরগড়ের বিকাশচন্দ্র ঘোষকে কেন ‘বাংলা ফসল বিমা যোজনার’ ব্যক্তিগত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেন। এর পরেই ৭ অগস্ট ওই বিমা সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিকাশবাবুকে চিঠি দিয়ে উচ্চপর্যায়ে আবেদন জানানোর জন্যে বলেছেন।
জগন্নাথবাবু বলেন, “ফসল বিমা যোজনার জন্যে রাজ্য সরকার কৃষকদের বিমা করিয়ে দিচ্ছে। এক জন কৃষক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করার পরেও, ব্যক্তিগত ফসলের ক্ষতির বিমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন গড়িমসি করবে, কৃষককে হয়রানি করবে, তার বিস্তারিত ব্যাখা চেয়ে বিমা সংস্থাকে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছি।’’
এর আগে বর্ধমানের একটি সভায় কেন্দ্রীয় বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেছিলেন, “রাজ্য সরকার কৃষকদের নিখরচায় ফসল বিমা করিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, চাষে ক্ষতি হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছে। চাষিদের ঠিক ভাবে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা করতে।’’
এ ক্ষেত্রে কি হয়েছিল? গলসির ওই চাষির দাবি, উচালন গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায় ৩.৭৩ একর জমি রয়েছে তাঁর। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই থেকে বেশ কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে তাঁর জমি জলে ডুবে যায়। ওই অবস্থায় ফসল তোলা সম্ভব ছিল না। ফসলে ক্ষতির চরম আশঙ্কা করে নিয়ম মেনে ১৮ জুলাই বিমা সংস্থাকে চিঠি পাঠান তিনি। একই সঙ্গে গলসি ১ ব্লকের কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তাকেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ম মেনে জানান পুরোটা।
বিকাশবাবুর অভিযোগ, বিমা সংস্থা প্রথম থেকেই সরেজমিন তদন্ত করতে টালবাহানা করছিল। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানানোয় ঘটনার তিন মাস পরে ২৩ অক্টোবর বিমা সংস্থা ও কৃষি দফতরের কর্তারা যৌথ ভাবে মাঠ পরিদর্শন করতে আসেন। তার পরেও টাকার ব্যাপারে বিমা সংস্থা কিছু না জানানোয় চিঠি পাঠাতে শুরু করেন তিনি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান ও গলসি ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিকেরা বিকাশবাবুর জমির ফসল ভারী বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে বলে বিমাসংস্থাকে জানান।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, বিমা সংস্থা প্রথমে ‘নট অ্যাপ্লিকেবল’ বলে জানায়। পরে এ বছরের এপ্রিলে চিঠি দিয়ে জানায়, ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ফসলের কোনও ক্ষতি হয়নি। বিকাশবাবুর জমিতেও ক্ষতি হয়নি। তাই তিনি কোনও ক্ষতিপূরণ পাবেন না। বিকাশবাবু ফের চিঠি দিয়ে জানান, তাঁর মৌজায় বেশ কয়েকজনের জমির ফসল ভারী বৃষ্টির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কারও ফসল বিমা করা ছিল না বলে আবেদন করেননি। বিমা করা থাকায় ব্যক্তিগত ভাবে তিনি ক্ষতিপূরণ চাইছেন। আর ক্ষতির কথা কৃষি দফতর, স্থানীয় পঞ্চায়েত মেনে নেওয়ার পরেও কেন তিনি ফসল বিমা পাবেন না, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। তার পরেই বিমা সংস্থার তরফে চিঠি দিয়ে উচ্চস্তরে আবেদন জানাতে বলা হয়েছে।