প্রতীকী ছবি।
গত বারের চেয়ে তুলনামূলক কম লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ধান কিনতে নামবে জেলা খাদ্য দফতর। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা স্তরের খাদ্য দফতরের বৈঠকে (ডিএলএমসি) চলতি মরসুমের (অক্টোবর থেকে সেপ্টেম্বর) ধান কেনার রূপরেখা তৈরি হবে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ২ নভেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু হবে। দফতর সূত্রে জানা যায়, আগে যাঁরা সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির জন্যে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন, তাঁরা পুরনো নথিভুক্তির কাগজ দেখালেই সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবেন।নতুনদের জন্য চলতি মাসে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে।
খাদ্য দফতরের উপ-অধিকর্তা (পূর্ব বর্ধমান) আবির বালি বলেন, “এই পদ্ধতির ফলে, গত বছর কত কৃষক সহায়ক মূল্যের সুবিধার বাইরে ছিলেন, তা জানা যাবে। সেই সংখ্যা খুব বেশি বলে আমাদের মনে হয় না।’’ গত মরসুমে পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমন ও বোরো মিলিয়ে ছ’লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। মরসুম শেষে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ লক্ষ ৯৪ হাজার টন ধান কিনেছে জেলা খাদ্য দফতর। এক লক্ষ ৪৭ হাজারের বেশি চাষি ওই ধান বিক্রি করেছিলেন।
খাদ্য দফতরের দাবি, গত মরসুমে লকডাউনের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থায় কার্ড বা পরিবার পিছু চালের পরিমাণ বাড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। এ ছাড়া, রেশন কার্ড না থাকা পরিবার, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘ফুড কুপন’ দেওয়া হয়। তাই আচমকা চালের বাড়তি জোগানের প্রয়োজন হয়েছিল। এ মরসুমে তার প্রয়োজন হবে না ধরে নিয়ে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা চার লক্ষ টন রাখা হচ্ছে বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর। প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ভাবনাচিন্তা করা হবে।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, গোড়ায় ২৩টি ‘সিপিসি’ (সেন্ট্রাল প্রকিয়োরমেন্ট সেন্টার) থেকে ধান কেনা শুরু হবে। ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩০টি করা হবে। এ ছাড়া, বেশ কয়েকটি ‘ডিপিসি’ (ডিরেক্ট পারচেজ় সেন্টার) খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে খাদ্য দফতরের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গ্রামে-গ্রামে শিবির করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ধান কিনবে। সমবায় দফতরের সঙ্গে জড়িত ‘ফার্মার প্রোডাক্ট অর্গানাইজেশন’ (এফপিও) এবং ‘ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি’ও (এফপিসি) এ বার ধান কেনার সুযোগ পাবে বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলকোট, গলসি-সহ বেশ কিছু জায়গায় ‘সিপিসি’-কে এড়িয়ে সরাসরি চালকলে ধান নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে চাষিদের। ফলে, ধানের গুণমান নিয়ে চাষি ও চালকলের মধ্যে বিবাদ হচ্ছে। প্রতিটি ব্লকে থাকা ‘থ্রি ম্যান কমিটি’ সমাধানসূত্র বার করলেও চাষিদের মনঃপুত হচ্ছে না। সে জন্য আবির বালি বলেন, ‘‘সিপিসি-র অনুমোদন ছাড়া, চালকল ধান নেবে না, এমন প্রস্তাব ডিএলমিসি বৈঠকে রাখা হবে।’’
চালকল মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, খাদ্য ভবন চালকলগুলির জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে। তা নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। ওই সংগঠনের রাজ্যের কার্যকরি সভাপতি আব্দুল মালেকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। বৈঠকেও সে কথা তোলা হবে। তার আগে এ বিষয়ে কিছু বলব না।’’ গত মরসুমে ১৩৭টি চালকল সহায়ক মূল্যে ধান ভাঙানোর জন্য দফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। কয়েকটি চালকলের কাছ থেকে চাল পাওয়া যাবে বলে ইতিমধ্যে নোটিস দিয়েছে খাদ্য দফতর।