রাজ্যপালকে কালো পতাকা আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিক্ষোভের মুখে পড়লেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। দেখানো হল কালো পতাকা। উঠল ‘গো ব্যাক’ স্লোগান। বুধবার সকালে এই ঘটনা নিয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে রাজ্যপাল জানান, পড়ুয়াদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার রয়েছে। তবে তাঁরা কোনও ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন বলেও ধারণা রাজ্যপালের।
রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের আপত্তি সত্ত্বেও বুধবার কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ্যপাল বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছন। তবে তাঁর আসার পথে সকাল থেকেই টিএমসিপি নেতা-কর্মীরা জমায়েত করেছিলেন। রাজ্যপালের কনভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। পুলিশে আগে থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখায় বিষয়টি বেশি দূর গড়ায়নি। বিক্ষোভের মধ্যেই রাজ্যপালের কনভয় সমাবর্তন মঞ্চের কাছে পৌঁছয়। আচার্যের উপস্থিতিতে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
এ দিন বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে, সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমরা অস্থায়ী উপাচার্যের পরিবর্তে স্থায়ী উপাচার্য চাইছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ মানছি না।’’ অভিনবের দাবি, তাঁরা সমাবর্তন আয়োজনের বিরোধী নন। কিন্তু আয়োজনের পদ্ধতিগত ত্রুটির বিরোধিতা করছেন। নিয়ম মেনে এই অনুষ্ঠান তিন মাস পরেও করা যেত, দাবি তাঁদের। এ দিনের বিক্ষোভ শামিল হয়েছিলেন তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক সংগঠনের সদস্যেরাও।
অনুষ্ঠান শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পড়ুয়া-বিক্ষোভ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, ‘‘যে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁদের নিশ্চয় কোনও কারণ আছে বিক্ষোভ দেখানোর। তাঁদের কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে। আমার কাছে এলে তাঁদের বক্তব্য শুনব। পড়ুয়াদের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নতুন কিছু নয়।’’ বিক্ষোভকারীদের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তাঁরা নিশ্চয় কোনও মতবাদে বিশ্বাসী। তাঁরা নবীন, কোনও ভাবে প্রভাবিত হয়ে তাকতে পারেন। তাঁদের প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অধিকার আছে।’’ তাঁর মতে, পড়ুয়াদের অবশ্যই রাজনৈতিক মত থাকবে। তবে তা যেন প্রতিষ্ঠানের ভিতরের সম্প্রীতি ও নির্মল পরিবেশকে প্রভাবিত করতে না পারে, তা দেখতে হবে। সমাবর্তনে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে শুধু রাজ্যপালকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হল, টিএমসিপি-র এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাজ করছেন। আমি নিজের কাজ করছি। তবে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান একই।’’ পড়ুয়াদের ‘গো ব্যাক’ স্লোগান নিয়ে রাজ্যপাল মজার ছলে বলেন, ‘‘ওঁরা আমাকে বলতে চেয়েছেন, আপনার বয়স হয়েছে। আপনি এত পরিশ্রম করছেন। ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নিন।’’
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনস্থ কলেজগুলির শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়ারা ছাড়াও, জেলার বিশিষ্টজনেদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছন রাজ্যপাল। তাঁকে বরণ করার পরে অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণ দেন উপাচার্য দোশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামক চন্দন কোনার জানান, এ দিন ডিগ্রি প্রাপকদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি, ৪৩ জনকে পিএইচডি এবং ৫৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য ১৫১ জন কৃতীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।