বিপদের আশঙ্কা নিয়ে হাতি দেখার ভিড় আউশগ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
হাতিদের হানা থেকে জমির ধান বাঁচাতে মরিয়া চাষিরা মশাল নিয়ে মাঠ-পাহারা দিলেন। কোথাও আবার হাতিদের ঠেকাতে বাজি ফাটানোর অভিযোগও উঠল। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দিনভর দফায় দফায় বনকর্মীদের সঙ্গে বাসিন্দাদের একাংশের বচসা বাধল। এমনই নানা কারণে হাতিরা আউশগ্রামের নওয়াদার ঢাল, আলিগ্রাম, দেয়াশা এলাকায় আটকে থাকল অনেকক্ষণ। যার ফলে, দলমার হাতিরা এ দিনও আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকার জমি দাপিয়ে বেড়ানোয় ধানের ক্ষতিও বাড়ল। বন আধিকারেরা জানাচ্ছেন, বাসিন্দাদের সহযোগিতা না পেলে হাতিদের ফেরত পাঠানো কঠিন হয়ে উঠবে।
বুধবার অনেক রাতে দামোদর টপকে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে গলসিতে ঢুকে পড়ে প্রায় ৫০টি হাতি। বন দফতর সূত্রে খবর, গত দু’দিনে গলসি ও আউশগ্রামের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় হাতির দলটি আশ্রয় নেয় আউশগ্রামের কুমারগঞ্জের ছোট জঙ্গলে। বন দফতরের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব চক্র) কল্যাণ দাস বলেন, “আমরা হাতিদের ফেরত পাঠাতে চাইছি। তবে কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রাম পাহারা দেওয়ায় হাতিরা একটা জায়গাতেই আটকে ছিল। তাই আউশগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে হাতির দলকে টেনে নিয়ে গিয়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকিয়ে দিতে হয়েছে।’’ ডিএফও (পূর্ব বর্ধমান) নিশা গোস্বামী জানান, অন্ধকার নামলে হাতিদের বাঁকুড়ায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, কুমারগঞ্জের জঙ্গল থেকে হাতির দলটিকে বার করে তারা ভাল্কির জঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে চায়। সেখান থেকে যমুনাদিঘি হয়ে গলসির পারাজে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে পার করে দামোদরের রাস্তা ধরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে হাতির মর্জিই আলাদা। তাদের দামোদর পার করে বাঁকুড়া জেলায় ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত স্বস্তি নেই বলে জানাচ্ছেন বনকর্মীরা।বন দফতর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে নওয়াদার ঢাল এলাকা থেকে হাতিরা আশপাশের দেয়াশা, শিবদা, আলিগ্রামের দিকে যায়। হাতিদের গতি ঠেকাতে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা ধানজমির ধারে মশাল জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার হাতিদের ভয় দেখাতে শব্দবাজি ফাটাতে শুরু করেন।
এ নিয়ে স্থানীয় একটি গ্রামের কিছু বাসিন্দার সঙ্গে হাতি তাড়াতে যাওয়া হুলাপার্টির লোকজনের গোলমাল বাধে। অভিযোগ, হুলাপাটির লোকেদের মশাল কেড়ে নিয়ে তাঁদের হেনস্থা করা হয়। তারপরেই হুলাপার্টির লোকেরা হাত গুটিয়ে নেন। এই পরিস্থিতিতে তিনটে হাতি দলছুট হয়ে যায়। তবে বন দফতরকে স্বস্তি দিয়ে ভোরের দিকে ফের হাতিগুলি নিজেদের দলে যোগ দেয়।
ভোরের দিকে শিবদা হয়ে গুসকরা শহরের কাছে পৌঁছে যায় হাতির দল। বিপদ আঁচ করে লোকালয়ের ভিতর হাতির দল যাতে ঢুকতে না পারে সে জন্য বনকর্মীরা ও পুলিশ স্থানীয়দের নিয়ে চার দিকে ঘিরে রাখেন। পরে, হাতির দলটি বর্ধমান-রামপুরহাট রেললাইন পার করে দ্বারিয়াপুরের মাঠের দিকে চলে যায়।
বনকর্মীদের দাবি, আলিগ্রাম-দেয়াশা থেকে ফের পটকা ফাটানোর আওয়াজ শুনে হাতির দল ঘুরে চলে যায় গোন্নার দিকে। সেখান থেকে গুসকরা-মানকর রোড পার করে, দুপুরের দিকে জঙ্গলের রাস্তা ধরে। হাতির দলের যাতায়াতে যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্যে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ যান চলাচল সাময়িক ভাবে আটকে দেয়।
প্রশ্ন উঠছে, যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরেও সাতটি শাবক-সহ ৫০টি হাতিকে গন্তব্যস্থল, বাঁকুড়ার দিকে ফেরত পাঠানো গেল না কেন? বন দফতরের একাধিক আধিকারিকের দাবি, সঙ্গে সাতটি শাবক থাকায় হাতির দলটির গতি কিছুটা মন্থর। তার উপরে দিনভর তাদের ঘিরে কৌতূহলী জনতার ভিড় আর ধান রক্ষার জন্য গ্রাম পাহারা শুরু হওয়ায় পরিকল্পনা মতো ফেরত পাঠানোর কাজে অসুবিধা হচ্ছে। বন দফতরের এক আধিকারিকের সংযোজন: ‘‘এখানে মাঠ ভরা ধান। যথেষ্ট পরিমাণের খাবার থাকায় হাতিরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পেট পুরে খাচ্ছে। সে জন্য ধান জমি দিয়ে তাদের চলাচলেও সময় লাগছে।’