—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দামোদরের শাখা হিসেবে মুণ্ডেশ্বরীর উৎপত্তি জামালপুরের জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েতের মুইদিপুরে। এই মুণ্ডেশ্বরীর জলেই হুগলির একাংশ ফি বছর প্লাবিত হয়। নিম্ন দামোদরে বন্যারোধে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সহায়তায় নদী সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল সেচ দফতর। ভাঙন ঠেকাতে বোল্ডার দিয়ে নদীর পাড় বাঁধানো হয়েছিল। তবুও সম্প্রতি ডিভিসির ছাড়া জল উপচে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা। দেখা দিয়েছে ভাঙনও।
স্থানীয়দের কাছে মুইদিপুর ‘বেগোর মুখ’ নামে পরিচিত। এখানে মুণ্ডেশ্বরীর এক দিকে জামালপুর, অন্য দিকে মাধবডিহির বড় বৈনান। মুণ্ডেশ্বরী ফুলে ওঠায় দেবখালের জল ‘ব্যাক ফ্লো’ করে প্লাবিত করেছিল বড় বৈনানের বেশ কিছু গ্রাম। বাসিন্দারা মুণ্ডেশ্বরীর সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। জেলাশাসক আয়েষা রানী পুজোর ছুটি কাটার পরেই এ নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন। সেচ দফতরও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। সেচ দফতরের দামোদর ডিভিশনের (মুণ্ডেশ্বরী) এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, “বেগোর মুখ এলাকা দিয়ে তিন লক্ষ কিউসেক জল পাশ করেছে। এই বিশাল পরিমাণ জলের প্রবাহে কিছু ক্ষতি হয়েছে।”
‘বেগোর মুখে’র কাছে দামোদরের গা ঘেঁষে রয়েছে জামালপুরের অমরপুর, পাইকপাড়া, শিয়ালি, কোরা, সাজেমলতলা-সহ বিভিন্ন গ্রাম। আর মুণ্ডেশ্বরীর দিকে রয়েছে মাধবডিহির গোতান, সুবলদহ, বড় বৈনান, বাতাসপুরের মতো কিছু গ্রাম। পুজোর মুখে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির জেরে ও ডিভিসির ছাড়া জলে ‘বেগোর মুখে’ দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী উপচে যায়। জল নামার পরেই ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ডিভিসি জল ছাড়লেই ‘বেগোর মুখ’ এলাকার আশপাশের গ্রামগুলিতে জল ঢুকে যেত। সংস্কারের পরেও সেই ছবির বদল হয়নি। নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের বাঁধে আশ্রয় নিতে হয়েছে। দামোদরের পাড়ের বেশ কিছু জায়গায় ‘বোল্ডার পিচিং’ ধসে পড়েছে। বাসিন্দারা যা দেখে রীতিমতো হতাশ। বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় নদীর নাব্যতা বাড়ানোর কাজের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। জল কমতেই বোল্ডার খুলে গিয়ে দামোদরে ভাঙন দেখা দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।
বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা খরচে মুণ্ডেশ্বরী সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল সেচ দফতর। মূল উদ্দেশ্য ছিল, নদীর পলি তুলে জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো। সেচ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পলি জমে দামোদরের চেয়ে মুণ্ডেশ্বরী উঁচু হয়ে গিয়েছিল। অতি বৃষ্টি বা ডিভিসি জল ছাড়লে দামোদর থেকে ৫০ হাজার কিউসেক জল মুণ্ডেশ্বরীতে গিয়ে পৌঁছত না। দামোদরের চেয়ে মুণ্ডেশ্বরী চওড়া। তার পরেও অন্য সময় মুণ্ডেশ্বরীতে জল থাকত না। বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় মুণ্ডেশ্বরীর নাব্যতা ১৯ কিলোমিটার (বর্ধমানের দিকে ৫ কিলোমিটার আর হুগলিতে রয়েছে ১৪ কিলোমিটার) বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ, হুগলির দিকে সংস্কার হলেও বর্ধমানের দিকে কাজে গড়িমসি করেছিল সেচ দফতর। তার ফল ভুগতে হয়েছে গ্রামগুলিকে।
সেচ দফতরের এক সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অবশ্য বলেছেন, “আগে মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে জল যেত না। নাব্যতা বাড়ানোর পরে ৭০% জল মুণ্ডেশ্বরী আর ৩০% জল দামোদর দিয়ে বেরিয়ে যায়। একে বারে ৩ লক্ষ কিউসেক জল পাশ করার জন্য কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা সংস্কারের সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।”