ঘটনাস্থলে সিআইডি-র আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র
ঘটনা ঘটেছিল দুপুরে। কিন্তু কোন থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, তা বার করতে পেরোল রাত। আউশগ্রামের গেঁড়াই থেকে মোটরবাইকে বুদবুদের দেবশালা ফেরার সময়ে গুলিতে পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলের খুন হওয়ার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে যৌথ ভাবে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার এলাকায় তদন্তে আসেন সিআইডি-র আধিকারিকেরা।
জঙ্গলের ভিতর দিয়ে মানকর থেকে ভুঁইটা যাওয়ার আঁকাবাঁকা রাস্তা। তার নানা অংশ পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ও আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের বুদবুদ থানার অন্তর্গত এলাকা। সেখানেই পড়েছিল দেবশালা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সীর ছেলে চঞ্চল বক্সীর গুলিবিদ্ধ দেহ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তার প্রায় তিনশো মিটারের মধ্যে মেলে মোটরবাইক, একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি জামা। ঘটনাস্থল কোনটি, তা বার করতে মঙ্গলবার রাত পেরিয়ে যায়। শেষে ঠিক হয়, নিহতের পরিজনেরা যেখানে অভিযোগ করবেন, সেখানেই মামলা শুরু করে তদন্ত হবে। বুধবার বর্ধমানে পুলিশ সুপারের দফতরে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন নিহতের পরিজনেরা। তার ভিত্তিতে আউশগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘ঘটনার কিনারা করতে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ও আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারেট যৌথ ভাবে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল সিআইডি-র পূর্ব বর্ধমানের শাখার আধিকারিকরা। তাঁরা নিহতের পরিজনদের সঙ্গেও কথা বলেন।
নিহতের বাড়িতে শোকের ছায়া।
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, বেশ কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় কারা তদন্তভার নেবে, সে নিয়ে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের সমন্বয় বৈঠকে ওই এলাকা পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের অধীনে আনার প্রস্তাবও উঠেছিল। মঙ্গলবার খুনের ঘটনার পরে তদন্তভার নিয়ে দুই থানার টানাপড়েনে তদন্ত-প্রক্রিয়া পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের পরিজনদের অনেকে। জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, তদন্ত প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। থানার সীমানাবর্তী এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে দু’টি থানাই প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে দেয়। এ ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।
দেবশালা মোড়ে বাসিন্দাদের একাংশের পথ-অবরোধ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘যে জায়গা থেকে দেহ তোলা হয়েছে, জঙ্গলের ভিতরে রাস্তার ওই অংশ বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী, বুদবুদ থানায় পড়ে। তাই বুদবুদ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে। তারা দেখতে পায়, যেখানে দেহ পড়ে, তার প্রায় ৩০০-৩৫০ মিটার দূরে মোটরবাইক, গুলির খোলের টুকরো ও রক্তমাখা জামার অংশ পড়ে রয়েছে। তা আবার আউশগ্রামের অমরপুর পঞ্চায়েতের গেঁড়াই মৌজায় রয়েছে। তখন তারা বেঁকে বসে। আউশগ্রাম থানার অফিসারদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। সে সব মেটাতেই রাত পর্যন্ত টানাপড়েন চলে।’’ নিহতের ভাই রাহুল বক্সীর দাবি, ‘‘তদন্ত কারা করবে, তা নিয়ে টানাপড়েনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’ দেবশালা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি হিমাংশু মণ্ডলেরও দাবি, ‘‘প্রশাসন নিশ্চয় জানে, কোন এলাকা কার অধীনে। তদন্তভার নিয়ে আরও আগে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ছিল।’’ এলাকাবাসীর দাবি, কয়েক বছর আগে ওই এলাকা থেকে কিছুটা দূরে একটি খুনের ঘটনায় তদন্তভার নিয়ে টানাপড়েন হয়েছিল। তবে সেটা ছিল জেলা ভাগের আগে। বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, এখন জেলা পূর্ব বর্ধমান হলেও তাঁরা রয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে। ফলে, কোনও ঘটনা ঘটলে কোন থানায় অভিযোগ করা হবে, সে নিয়ে চিন্তা থেকে যায়। একাধিক বাসিন্দার দাবি, ‘‘অনেক সময়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। তাই এখন ফোন করে জেনে নির্দিষ্ট থানায় যাই।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এমন সমস্যার কথা গত বছর নভেম্বরে দুই জেলার সমন্বয় বৈঠকে উঠেছিল। আউশগ্রাম ১ ও গলসি ১ ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক কাজকর্ম হয় পূর্ব বর্ধমানে, অথচ সুরক্ষার দায়িত্বে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বুদবুদ থানা। এ নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ আউশগ্রামের দেবশালা ও কোটা পঞ্চায়েতকে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। ডিভিশনাল কমিশনারের নেতৃত্বে দুই জেলা যৌথ পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।