দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
ওয়ার্ডের সংখ্যার তুলনায় রক্ষী কম। পরিসর বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে নির্যাতন করে খুনের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে নানা হাসপাতালেরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চিত্রও সামনে এসেছে। রবিবারই রাজ্যের মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার জানান, এই হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে। তবে আরজি করের ঘটনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৯টি। রক্ষীর সংখ্যা ১৭ জন। তাঁরা মূলত রোগীর পরিজনের আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণেই ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকে বলে দাবি রোগীর পরিজন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, রোগীর আত্মীয় সেজে যে কেউ হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যেতে পারেন। আরও দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিচয়পত্র দেখে ভিতরে ঢুকতে দেওয়ার কথা বললেও, তা হয় না। এমনকি অনেক সময়ে হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করার জন্য যে কার্ড দেওয়া হয়, তা না দেখিয়েও কেউ কেউ ঢুকে পড়েন ওয়ার্ডে। অতীতে শিশু চুরির মতো ঘটনার অভিযোগ উঠেছে এই হাসপাতালে।
হাসপাতালের সুপার ধীমান মণ্ডল বলেন, “পরিচয়পত্র ছাড়া কারও ভিতরে ঢোকার নিয়ম নেই। তবে হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ছে। ফলে, অনেক সময়ে রক্ষীদের সামাল দিতে সমস্যা হয়। পরিকাঠামো আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।” হাসপাতালের বাইরে ও ভিতরে এখন মোট ৪৮টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তা যে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়, স্বীকার করেন সুপার। তিনি বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার সংখ্যা আরও বাড়লে ভাল। হাসপাতালের পরিসর অনেক বেড়েছে। ফলে, সিসি ক্যামেরার সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিন গুণ করতে পারলে ভাল হয়।” বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কবি দত্ত কাঁকসার মলানদিঘির একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার আর্জি জানান। এগিয়ে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কত জন রক্ষী দরকার, তা খতিয়ে দেখে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সেই অনুযায়ী তাঁরা ব্যবস্থা করবেন। ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে পার্থ পোবি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ঢোকার দু’টি গেট-সহ যেমন প্রয়োজন হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরজি করের ঘটনার পরেই কি নিরাপত্তা বাড়ানোর এই প্রচেষ্টা? সুপার দাবি করেন, গত দেড় মাস ধরে এ সব নিয়ে আলোচনার পরে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে মহকুমা হাসপাতালের মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি। আরজি করের ঘটনার পরে নিরাপত্তা নিয়ে সরকারি তরফে কোনও নির্দেশিকা এলে তা পালন করা হবে।”
একই সঙ্গে, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার উন্নতির জন্য শহরের বিধাননগরের ইমন কল্যাণ সরণি ও সিটি সেন্টারের গান্ধী মোড় লাগোয়া দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের কাছেও আর্জি জানান কবি দত্ত। তারা সম্মত হয়। কবি বলেন, “বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে কিছু দিন ধরে। সাহায্যে এগিয়ে এসেছে তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল।” ওই হাসপাতালগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, সামাজিক দায়িত্বপালন প্রকল্পের (সিএসআর) মাধ্যমে এই কাজ করবে তারা।