ভারী বাতাসে আশঙ্কা দেখছে শিল্পাঞ্চলও

দূষিত ভারী বাতাসে অন্ধকার হয়ে উঠেছে দেশের রাজধানীর আকাশ। আর সেই পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা বাসা বাঁধছে শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের মনেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
Share:

কারখানার ধোঁয়ায় কালো আকাশ। দুর্গাপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দূষিত ভারী বাতাসে অন্ধকার হয়ে উঠেছে দেশের রাজধানীর আকাশ। আর সেই পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা বাসা বাঁধছে শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের মনেও। কারখানার দূষণে এমনিতেই নাজেহাল তাঁরা। দিন কয়েক সাফ না করলেই অনেক এলাকায় বাড়ির জিনিসপত্রে জমে যায় কালো আস্তরণ। বাতাসে ভাসমান কণার হার উদ্বেগজনক বলে জানাচ্ছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মতো বিদ্যুৎকেন্দ্র বা খড়-আগাছা পোড়ানোর ধোঁয়া যোগ হলে কী পরিস্থিতি হতে পারে, সে কথা ভেবেই চিন্তায় আসানসোল-দুর্গাপুরের বাসিন্দারা।

Advertisement

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা এবং সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ কত, তার নিরিখেই বায়ুদূষণের মাত্রা মাপা হয়। সেগুলি মাপার জন্য নানা জায়গায় যন্ত্র বসাতে হয়। আসানসোলে যেমন এই ধরনের পাঁচটি যন্ত্র বসানো রয়েছে। দুর্গাপুরেও রয়েছে বেশ কয়েকটি যন্ত্র। সেখান থেকে নিয়মিত দূষণের মাত্রা মাপা হয়।

দুর্গাপুরে সিটি সেন্টার এলাকায় পর্ষদের বসানো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের হিসেব অনুযায়ী, ৭ নভেম্বর শহরের বাতাসে কার্বন মনোক্সাইডের গড় উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘন (কিউবিক) মিটারে ১.০৮ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ২২.৩১ মাইক্রোগ্রাম, ওজোন ১২.৩৪ মাইক্রোগ্রাম, ভাসমান ধুলিকণা (১০ মাইকোগ্রামের থেকে ছোট আকারের) ৬৭.৫২ মাইক্রোগ্রাম এবং সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ১০.৫৭ মাইক্রোগ্রাম। সেই হিসেবে সবগুলিই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মাত্রার নীচে। কিন্তু শহরের বেশ কিছু এলাকা, বিশেষ করে শিল্পতালুক এবং জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকাগুলিতে বাতাসে ভাসমান কণার হার স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বলে জানাচ্ছে পর্ষদ। আসানসোলের নানা এলাকাতেও বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

বাতাসে ভাসমান কণার গড় স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। দীপাবলির সময়ে শহরের বহু এলাকায় তা দ্বিগুণের বেশি হয়ে গিয়েছিল বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। অঙ্গদুপরে পর্ষদের দূষণ মাপার যন্ত্রের হিসেব অনুযায়ী, শিল্পতালুক থাকায় সেখানে ভাসমান কণার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় সব সময়ই বেশি থাকে। দীপাবলির সময়ে তা প্রায় তিন গুণের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। একই ভাবে জাতীয় সড়কের আশপাশেও ভাসমান কণার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। কল-কারখানা ছাড়াও ভাসমান কণার অন্যতম উৎস গাড়িঘোড়ার ধোঁয়া ও নির্মাণকাজ। যত দিন জাতীয় সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হবে তত দিন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম, এমনটাই মনে করছে পর্ষদ।

গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুরে। তার জেরে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। তবে একই সঙ্গে বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে কমেছে দুর্গাপুরে। দেখা গিয়েছে, স্পঞ্জ আয়রন জাতীয় কারখানাগুলির রমরমার সময়ে দুর্গাপুরে ভাসমান ধুলিকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশ কয়েকগুণ পর্যন্ত বেশি হয়ে যেত। বিশেষ কিছু এলাকা বাদ দিলে এখন তা গড়ে স্বাভাবিকের আশপাশের থাকে। আসানসোলে নানা জায়গায় অবশ্য তা অনেকটা বেশি বলে পর্ষদ সূত্রে জানা যায়। বেশ কিছু কারখানার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে রাতে দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার না করার অভিযোগ ওঠে।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা মাঝে-মাঝেই কারখানাগুলিতে অভিযান চালাচ্ছি। নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ জরুরি। আমরা সে ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement