জেলা সম্মেলন ঘিরে জল্পনা

আলোচনা শ্রমিকের ক্ষোভ নিয়ে

দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টকে বেসরকারিকরণ করার তোড়জোড় চলছে বলে ক্ষোভ রয়েছে শ্রমিক মহলে। এ ছাড়া ২০১১ সালে ডিএসপি থেকে ছাঁটাই হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী। রূপনারায়ণপুরে হিন্দুস্তান কেব্‌লস বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

একদা শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু পরপর নির্বাচনে এই জেলার অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত। সেই সঙ্গে রয়েছে ‘বিজেপি-কাঁটা’ও। এই পরিস্থিতিতে প্রথম জেলা সম্মেলন সিপিএমের। ১১ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের সম্মেলনটি হবে জামুড়িয়ায়। এলাকার রাজনৈতিক মহলের মতে, শ্রমিক সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে হারানো মাঠের দখল নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে সম্মেলনে।

Advertisement

দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টকে বেসরকারিকরণ করার তোড়জোড় চলছে বলে ক্ষোভ রয়েছে শ্রমিক মহলে। এ ছাড়া ২০১১ সালে ডিএসপি থেকে ছাঁটাই হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী। রূপনারায়ণপুরে হিন্দুস্তান কেব্‌লস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নানা খনিও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে দাবি করেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। — রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, এমনই নানা ইস্যুকে সামনে রেখে শ্রমিক-ক্ষোভকে কী ভাবে সংগঠিত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে সম্মেলনে।

কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনে ফের জোর দেওয়া কেন? জেলা সিপিএমের এক নেতার দাবি, এই ভাবেই নির্বাচনী ময়দানেও সুফল পাওয়া গিয়েছে। তার প্রমাণ, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুরের দু’টি এবং রানিগঞ্জ আসনটি।

Advertisement

এ ছাড়া সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকায় বাম নেতা-কর্মীদের বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার মতো ঘটনা। বিজেপি নেতা মুকুল রায়কেও সাম্প্রতিক অতীতে সিপিএম থেকে আসা নেতা-কর্মীদের দলে নেওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে ‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল’ এই নীতি নিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সংগঠনের ভিতরে এই ‘প্রবণতা’কে রুখতে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের নানা নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আন্দোলনে জোর দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জল্পনা।

জামুড়িয়ার নজরুল শতবার্ষিকী ভবনে সম্মেলনটি হবে। প্রথম দিন, প্রকাশ্য অধিবেশন হবে সামনের মাঠে। সেখানে ১১ জানুয়ারি যোগ দেবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

সম্মেলনের স্থান হিসেবে জামুড়িয়াকে বেছে নেওয়ার পিছনেও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। জেলা স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০১১ ও ২০১৬ বিধানসভা এবং ২০১৪-র লোকসভা ভোটের নিরিখে কোনও দিনই সিপিএম থেকে মুখ ফেরায়নি জামুড়িয়া। এর কারণ হিসেবে, জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, এই এলাকায় শাসক দলের সন্ত্রাস হলে তা ‘প্রতিরোধ’ করার মতো সংগঠনের জোর এখনও রয়েছে। জেলা জুড়েই দলের নেতা-কর্মীদের লক্ষ করে এই ‘প্রতিরোধ’-এর বার্তা দিতেই জামুড়িয়াকে স্থান হিসেবে নির্বাচনের একটি কারণ হতে পারে বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি।

সম্মেলনের আগে জনসংযোগ বাড়াতে জামুড়িয়ার নানা এলাকায় সংহতি দৌড়, আদিবাসী মহিলা–পুরুষ ফুটবল প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা, মোটরবাইক মিছিল, এ সবেরও আয়োজন করছে সিপিএম। তা ছাড়া গত কয়েক বছরে দলের সদস্য সংখ্যাও খানিক কমেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তরুণ প্রজন্মকে কী ভাবে কাছে টানা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জল্পনা। সিপিএমের জামুড়িয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত বলেন, ‘‘৪৫০ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেবেন। সংগঠন থেকেই আগামী দিনে এই জেলার আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement