শুরু হয়ে গিয়েছে ধনতেরাসের কেনাকাটা। আসানসোলে। —নিজস্ব চিত্র।
শাস্ত্র মতে, সমুদ্র মন্থনের ফলে দেবী লক্ষ্মী উঠে এসেছিলেন এই দিনে। পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য এই দিনে সোনা-রুপোর গয়না কেনার রীতি রয়েছে ভারত এবং নেপালে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ধনতেরাসের (বা ধনত্রয়োদশী) কেনাকাটার প্রকৃতিও। শুধু গয়না নয়, শুক্রবার, ধনতেরাসের কয়েক দিন আগে থেকেই ইলেকট্রনিক্স বা অন্য জিনিস কিনতেও ভিড় দেখা যাচ্ছে আসানসোলের বাজারে। কী কেনা হবে, তা নিয়ে বাড়িতে, বন্ধুমহলে জোর আলোচনা, আবদার, মন কষাকষি— সবই চলছে।
ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ঢুকেছিলেন পেশায় ইস্কো কর্মী সব্যসাচী সেনগুপ্ত। বাড়ির আবদার, ধনতেরাসে বাড়ির পুরনো ফ্রিজ বদলাতেই হবে। ধনতেরাসে পকেটে কোপ পড়বে আন্দাজ করে আগাম প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন সব্যসাচীবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বোনাসের সব টাকা শেষ না করে খানিকটা তুলে রেখেছিলাম বলে এ যাত্রা রক্ষা!’’
ধনতেরাসের বাজারে বুধবার থেকেই ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান সন্তোষ দত্ত নামে এক ব্যবসায়ী। আসানসোল বাজারের ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের বিক্রেতা স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ক’টা দিন বেশি বিক্রি হয়।’’ ক্রেতা টানতে আকর্ষণীয় ছাড়, উপহারও দিচ্ছেন তাঁরা।
শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, ধনতেরাসে সাধারণত লক্ষ্মী ও কুবেরের আরাধনা করা হয়। মূলত উত্তর ভারত ও নেপালে এই দিনটি পালনের রীতি রয়েছে। কল-কারখানা তৈরি হওয়ার পরে থেকেই কর্মসূত্রে বহু অবাঙালি পরিবার আসানসোলে ঘর বেঁধেছেন। শহরের এক পুরনো বাসিন্দার মতে, আবাসন হোক বা কারখানা সকলে মিলেমিশে থাকার রেওয়াজের কারণেই ভিন্ রাজ্যের সংস্কৃতি হওয়া সত্ত্বেও ধনতেরাস ‘উৎসবে’ জাত-ধর্মের সীমারেখা মুছে গিয়েছে বহু কাল।
বৃহস্পতিবার আসানসোল বাজারে গিয়ে দেখা গেল, আধুনিক প্রজন্ম অবশ্য শাস্ত্রকথা বা সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে তেমন উৎসাহী নন। তাঁদের কথায়, ‘‘বছরে এই একটা দিন শুধুমাত্র কেনাকাটার জন্যই রয়েছে!’’ এ দিনই বাবার সঙ্গে ঘুরতে দেখা গেল শহরেরই একটি কলেজের পড়ুয়া প্রিয়াঙ্কা মিত্রকে। তিনি বলেন, ‘‘ধনতেরাসে কে কী কিনবে, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা চলেছে। আমার একটা ল্যাপটপ দরকার। সেটাই কিনতে এসেছি।’’