আগুনে পুড়ে যাওয়া সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র
আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) দুর্গাপুরের ভবনে বিধ্বংসী আগুন লেগেছিল। সোমবার গভীর রাতের সেই ঘটনায় দমকল-এডিডিএ চাপানউতোর দেখা গিয়েছিল। শুক্রবার দমকলের ডিজি রণবীর কুমার ইঙ্গিত করলেন, হয়তো কোথাও যোগাযোগে সমস্যা (‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’) হয়েছে। পাশাপাশি, ফের জলের উৎস নিয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন রণবীর। যদিও, তা মানেনি এডিডিএ।
ঘটনার দিনেই, দমকল জানিয়েছিল, ‘রিজার্ভার’ ছিল না। জলের অভাবের কারণে আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে। যদিও, এর পাল্টা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, পাঁচশো মিটারের মধ্যে জলের অনেকগুলি উৎস আছে। তা হয়তো দমকল আধিকারিকদের জানা ছিল না। পাশাপাশি, দ্রুত অতিরিক্ত দমকলের ইঞ্জিন আনা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
এমন আবহে শুক্রবার রণবীর দুর্গাপুর দমকলকেন্দ্রের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন। সেখানেই তিনি মন্তব্য করেন, “হয়তো ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ হয়েছে।” এর পরেই তাঁর সংযোজন: “উনি (তাপস) কোন প্রেক্ষিত থেকে এ কথা বলছেন, সেটা ওঁর সঙ্গে কথা না বলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কেন ওঁর (তাপস) এমন ধারণা হয়েছে, সেটা জেনে নেব।” তিনি এ-ও জানান, খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে, পরিকল্পনা তৈরি করে কাজ শুরুর জন্য সামান্য হলেও সময় দমকলের প্রয়োজন। এ-ও দাবি করেন, ঘটনার দিন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু নিজে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন। রণবীর নিজেও দমকল আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে, দমকল যে জলের উৎসের সমস্যার কথা বলেছিল, এ দিনও ফের সে বিষয়টিতে অনড় অবস্থান নেন রণবীর। বলেন, “বাইরে থেকে দমকলের অতগুলি ইঞ্জিন আনতে হয়েছিল। জলের উৎসের সমস্যার জন্য অতগুলি ইঞ্জিন লেগেছিল।” দমকলের মোট ১১টি ইঞ্জিন আগুন নিভিয়েছিল।
পাশাপাশি, রণবীর এ দিন জানান, কোথাও আগুন ধরলে, জলের উৎস খুঁজে বার করতে সময় লাগে। তাই, সব বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে ‘রিজার্ভার’ রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। একই কথা বলা হয় ‘ফায়ার অডিটের’ সময়েও। তবে, এডিডিএ সূত্রে ব্যাখ্যা, যে ভবনটিতে আগুন লেগেছিল, সেটি ১৯৭২-এ তৈরি। তখন ‘রিজার্ভার’ তৈরির প্রথা ছিল না।
তবে, রণবীরের এমন বক্তব্যের কথা শুনে তাপস শুক্রবারও দাবি করেছেন, “পাঁচশো মিটারের মধ্যে একাধিক জলের উৎস রয়েছে।” তাঁর সংযোজন: “ডিজি কলকাতা থেকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছেন, এটাই বড় ব্যাপার। ওঁর সঙ্গে কথা হলে আমার ধারণা পরিষ্কার হবে।”
পাশাপাশি, ভবিষ্যতে ‘হাইড্রলিক ল্যাডার’ রাখা যাবে, এমন দমকলকেন্দ্র দুর্গাপুরে তৈরি করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন রণবীর। তবে তিনি জানিয়েছেন, হাইড্রলিক ল্যাডার থাকলেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, হাইড্রলিক ল্যাডারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। পাশাপাশি, ড্রোন দিয়ে আগুন নেভানোর পরিকল্পনা নিয়ে প্রাথমিক চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “বিষয়টি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। ড্রোন যে উচ্চতায় উঠছে, তার থেকেও উচ্চতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তখন আর হাইড্রলিক ল্যাডারের আর দরকার পড়বে না।”