রাত নামলেই বাড়ি থেকে শুরু কারবার

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন গঙ্গাটিকুরির তিনটি পাড়ায় কুড়িটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। হাঁড়িতে চোলাই তৈরির জন্য রাখা গুড় মেশানো পচা চাল উদ্ধার হয়। সেগুলি নষ্ট করা হয়েছে। কয়েকজন মহিলাকে আটক করা হয়।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরিতে অভিযান পুলিশের। নিজস্ব চিত্র

খড়ের চালা দেওয়া মাটির ঘর। ভিতরে দেওয়াল ঘেঁষে থরে-থরে সাজানো মাটির হাঁড়ি। সন্ধ্যা নামলেই ওই হাঁড়িতে রাখা চোলাই বোতলে ভরে সরবরাহ হয় এলাকায়। চোলাই তৈরি থেকে বিক্রি— পুরো কারবার চালান এলাকার কিছু মহিলা, অভিযোগ কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরিতে। শনিবার সেখানে অভিযান চালিয়ে চোলাই নষ্ট করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় পাঁচ মহিলা-সহ ছ’জনকে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন গঙ্গাটিকুরির তিনটি পাড়ায় কুড়িটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। হাঁড়িতে চোলাই তৈরির জন্য রাখা গুড় মেশানো পচা চাল উদ্ধার হয়। সেগুলি নষ্ট করা হয়েছে। কয়েকজন মহিলাকে আটক করা হয়। পুলিশের কাছে ওই মহিলারা অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা এ সব বিক্রি করেন না। নবান্নে নিজেরা খাওয়ার জন্য তৈরি করছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গঙ্গাটিকুরির মূলত তিনটি পাড়ায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার। কিন্তু দাসপাড়া, মাজিপাড়া ও তালারপাড়ে দিনের আলোয় গেলে তা টের পাওয়া যায় না। প্রকাশ্যে কোনও ভাটি চলে না। কিছু বাড়িতে চলা এই কারবার মহিলারা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে তিন পাড়ায় চোলাইয়ের খদ্দেরের আনাগোনা শুরু হয়। ভাত, গুড়, বাকর পচিয়ে মদ তৈরি করেন মহিলারা। এ সব কাঁচামাল আসে কোথা থেকে? বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বাড়ির বাড়তি ভাতের সঙ্গে আশপাশের মুদির দোকানের সস্তার গুড় মেশানো হয়। সাদা রঙের নেশা-দ্রব্য বাকরের জোগান দেয় মুর্শিদাবাদের সালার থেকে আসা কিছু লোক। লুকিয়ে-চুরিয়ে তা পৌঁছে যায় দাসপাড়া, মাজিপাড়ায়। ড্রাম বা কোনও বড় পাত্র নয়, ছোট মাটির হাঁড়ি বা ছোট-ছোট বোতলে বিছানার নীচে চোলাই মজুত রাখা হয়।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, ৬০০ মিলিলিটারের বোতল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। চোলাই তৈরি ও বিক্রির পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয় ভোর ৪টের মধ্যে। চোলাইয়ের সঙ্গে খদ্দেরের চাহিদামতো খাবার জোগানের ব্যবস্থাও রয়েছে বাড়িগুলিতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর পাঁচেক ধরে গঙ্গাটিকুরিতে চোলাইয়ের রমরমা বেড়েছে। সন্ধ্যার পরে বোলপুর-উদ্ধারণপুর রোডের ধারে বসে চোলাই খাওয়ার জেরে দুর্ঘটনা ঘটছে, এলাকায় অপকর্ম বাড়ছে বলেও অভিযোগ এলাকার অনেকের।

মহিলারা এই বেআইনি কারবার চালাচ্ছিলেন কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাসপাড়ার দুই মহিলার দাবি, আগে বাড়ির পুরুষেরা বাইরে চোলাই খেয়ে পয়সা নষ্ট করত। তাই বাড়িতেই তাদের চোলাই তৈরি করে দেওয়া শুরু করে কয়েকজন মহিলা। পরে তা এলাকায় কয়েকজনকে বিক্রিও শুরু করে তারা। এ ভাবেই কারবার শুরু। এক মহিলার কথায়, ‘‘বারো মাস মাঠে মজুরির কাজ থাকে না। থাকলেও দৈনিক দেড়শো টাকা মজুরিতে ছেলেমেয়েদের পড়া তো দূর, পেটের ভাতই ঠিকমতো জোটে না। প্রতি রাতে চোলাই বেচে ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়।’’

গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবণী দাসের বক্তব্য, ‘‘এই পঞ্চায়েত এলাকায় ছোট-বড় শ’দুয়েক স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। মহিলারা হাঁস-মুরগি পালন, সেলাইয়ের কাজ করে আয় করেন। এ ছাড়া একশো দিনের প্রকল্পে গড়ে ৮০-৮৫ দিন কাজ পান বাসিন্দারা। কেন কিছু মহিলা চোলাই তৈরির কাজ বেছে নিলেন, জানি না!’’

আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে এই এলাকায় চোলাই তৈরি হয় বলে খবর ছিল। কিন্তু দিনে মহিলারা জমিতে কাজ করেন। পর্যাপ্ত মহিলা কনস্টেবল না থাকায় রাতে সেখানে অভিযান চালানো যায়নি। কেতুগ্রামের আবগারি বিভাগের আধিকারিক গোপীনাথ সিংহ বলেন, ‘‘গত দু’মাসে গঙ্গাটিকুরি থেকে অন্তত ছ’জনকে চোলাই বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই বিক্রেতারা কখনও চোলাই জমিয়ে রাখে না। যা তৈরি করে রাতেই বিক্রি হয়ে যায়। নবান্ন উপলক্ষে এখন চোলাই কারবারের রমরমা।’’

কেতুগ্রাম ২ বিডিও অরিজিৎ দাস বলেন, ‘‘ওই এলাকার মহিলারা এ বছর এখনও পর্যন্ত গড়ে ৬২ দিন একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। চোলাই তৈরির অভিযোগ কখনও পাইনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement