রাধানগরে বাড়ির সামনে জটলা। (ইনসেটে) অজিত প্রসাদ। নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা ৭টা, বৃহস্পতিবার। আচমকা বেজে উঠল বাড়ির বড়ো ছেলে সুজিত প্রসাদের মোবাইল। বাড়ির মেজো ছেলে, পেশায় রেলকর্মী অজিত প্রসাদ (৩৪) বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, খবরটা কার্যত বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই আছড়ে পড়ে পশ্চিম বর্ধমানের রাধানগর রোড এলাকার তালপোখোরিয়ার বাড়িতে। খবর পেয়েই ময়নাগুড়ির উদ্দেশে ছোট ভাই অমরজিৎকে নিয়ে রওনা দেন ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের জওয়ান সুজিত।
শুক্রবার সকালে দেখা গিয়েছে, বৃদ্ধ বাবা লালন ও অজিতের স্ত্রী খুশবু যাতে মৃত্যু-সংবাদ না পান, সে জন্য বাড়ি কার্যত ঘিরে রেখেছেন অজিতের বন্ধুরা। ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। তবে বাড়ির অদূরেই চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন অজিতের কাকা বাবন প্রসাদ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-য় রেলের ‘ট্র্যাক মেন্টেনার’ পদে চাকরি পান অজিত। তাঁর কর্মস্থল ছিল, উত্তর-পূর্ব রেলের রঙ্গিয়া ডিভিশনে। বাবন বলেন, “রাতেই ভাইপোর সহকর্মীরা ঘটনার কথা জানান। আমরা সবাই এর পরে, অজিতের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করি। কিন্তু ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেন ওই ট্রেনে অজিত ছিল, তা-ও জানি না! কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না!’’
বাবা, দাদা, ভাই ও স্ত্রী’কে নিয়ে সংসার অজিতের। এক বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোটবেলাতেই মা মারা গিয়েছেন। গত বছর ২৬ এপ্রিল অজিতের বিয়ে হয়। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবই বার্নপুরের রাধানগরে। অজিতের বাল্যবন্ধুদের এক জন শম্ভু প্রসাদ বলেন, “কয়েক দিন আগেই আমাদের সঙ্গে কথা হয় অজিতের। হোলিতে বাড়ি আসার কথা ছিল ওর। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না ঘটনার কথা!” রাত পর্যন্ত অজিতের বাবা ও স্ত্রীকে ঘটনার কথা জানানো হয়নি বলেই জানান বন্ধুরা ও কাকা বাবন। তবে বাবন জানিয়েছেন, সুজিত দেহ পেয়েছেন। সুজিত তাঁকে জানিয়েছেন, আজ, শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ অজিতের দেহ রাধানগরে নিয়ে আসা হবে।