বর্ধমানের বিজয় তোরণ। ছবি: উদিত সিংহ
আলো ফুটেছে কার্জন গেটে। তা-ও আবার সেই বর্ধমান পুর উৎসবের সময়ে।
ফি বছর বর্ধমান পুর উৎসবের সময়ে কার্জন গেটের সামনের দিক ‘স্পট লাইট’ দিয়ে সাজা হয়ে থাকে। কিন্তু সেই আলোর ছটা গেটের উপরে থাকা তিন নারীমূর্তি পর্যন্ত পৌঁছয় না। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শহরের মানুষজনের দাবি, শুধু পুর উৎসব নয়, সারা বছর কার্জন গেটের দু’দিকে আলোর ব্যবস্থা রাখা উচিত পুরসভার। এ ছাড়া কার্জন গেটের চার দিকে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান। তাতে ঐতিহ্যবাহী গেটটি অবহেলিত হচ্ছে, স্থাপত্য নষ্টের সম্ভাবনা বাড়ছে। সেই সব দোকান সরানো ও স্থাপত্যের গা থেকে আগাছা পরিষ্কার করাও প্রয়োজন।
ঐতিহ্যবাহী ওই তোরণে সারা বছর আলো দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিলেন শহরবাসী। বর্ধমানের গর্ব কেন অন্ধকারে থাকবে, প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। তার পরেই পুরসভা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, পুর উৎসবের আগেই স্থায়ী ভাবে শতাব্দী প্রাচীন এই তোরণকে আলো দিয়ে সাজা হবে। কিন্তু তা হল না।
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে বিজয়চাঁদ রোডের উপরে রয়েছে এই তোরণটি। ইতিহাসবিদেরা জানান, বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদ মহাতাব তাঁর রাজত্ব দেখানোর জন্য লর্ড কার্জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি আসবেন বলে বর্ধমােনর রাজা ৬৫ ফুটের ওই তোরণটি তৈরি করান। মূল গেটের দু’দিকে খিলানের ছোট গেটও তৈরি করা হয়। বিজয়চাঁদ গেটটির নামকরণ করেছিলেন ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া’। ১৯৭৪ সালে গেটটি সংস্কারের পরে নাম হয় ‘বিজয় তোরণ’। তবে এখনও ওই তোরণ কার্জন গেট নামেই পরিচিত।
শহরবাসীর অনেকেরই ক্ষোভ, হকার ও একটি স্থায়ী দোকানের দাপটে খিলানের ছোট গেট কার্যত হারিয়ে গিয়েছে। বর্ধমান শহরের স্থাপত্য-গবেষক সর্বজিৎ যশ, সঞ্জীব চক্রবর্তীরা বলেন, ‘‘অন্ধকার থেকে কার্জন গেটকে আলোয় ফেরানোর জন্য আমরা পুরসভার কাছে বারবার আর্জি জানিয়েছি।’’ আইনজীবী কমল দত্তের বক্তব্য, ‘‘কার্জন গেটে পুরসভা স্থায়ী ভাবে আলো দিয়ে সাজার কথা বলেছিল। অস্থায়ী ভাবে আলো লাগানোর জন্য কোনও-কোনও সময়ে এক দিকটা জ্বলছে! তাতে আরও খারাপ দেখতে লাগছে।’’
স্থায়ী ভাবে আলো বসানো গেল না কেন? পুর পারিষদ সদস্য (আলো) সাহাবুদ্দিন খান বলেন, “দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। সে জন্য প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা যায়নি। এখন রিপোর্ট তৈরির পরে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৭-৮ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ই-টেন্ডার করতে বলা হয়েছে।’’ পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘স্থায়ী ভাবে আলো না লাগানো পর্যন্ত কার্জন গেটে অস্থায়ী আলোর ব্যবস্থা থাকবে। আমরা কথা রেখেছি।’’