দাবদাহে মুখ ঢেকে যাত্রা। কুলটিতে, জিটি রোডে। নিজস্ব চিত্র।
গরমের সঙ্গে যুঝতে রোদ-চশমা, টুপি, শীতাতপ-যন্ত্র থেকে মাটির কুঁজো সব কিছুরই কদর বাড়ছে আসানসোল, রানিগঞ্জ-সহ শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকার বাজারে। সে সঙ্গে, পোয়া বারো তরমুজ, শসা, ডাব বিক্রেতাদেরও। তবে তীব্র দাবদাহে সকালের পর থেকে সে ভাবে লোকজন রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
ঘটনাচক্রে, গত কয়েক দিন ধরেই আসানসোল-সহ পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অংশে সূর্যের তাপের দাপুটে ইনিংস দেখছেন বাসিন্দারা। বুধবারই আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল আসানসোলে, ৪৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবারও আসানসোল-সহ জেলার বিস্তীর্ণ অংশে তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছে।
আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন ও আসানসোল বাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক যথাক্রমে সুদীপ রায় এবং বিজন মুখোপাধ্যায়েরা জানান, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টে পর্যন্ত মোট বাসের ২৫ শতাংশের বেশি চলছে না। দু’জনেই জানাচ্ছেন, তীব্র দাবদাহে সকালে এক বার ও সন্ধ্যায় এক বার মোট দু’টি ‘ট্রিপে’ বাসে পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছে। এ ছাড়া, আর কখনই বাসে যাত্রী হচ্ছে না সে ভাবে। পরিবহণকর্মীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে দুপুরের দিকে ৭৫ শতাংশ বাস চলানো যাচ্ছে না বলে জানান তাঁরা। এ দিকে, এই পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু ক্ষেত্রে হাসি ফুটছে ব্যবসায়ীদের মুখে। রানিগঞ্জ হাটতলার ফল ব্যবসায়ী বিষ্ণু কর জানান, এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি তরমুজ, শশা বিক্রি হচ্ছে। দু’টিরই কিলো প্রতি দর ২০ টাকা। এ ছাড়া, ন্যূনতম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এক-একটি ডাব। আসানসোলের মুন্সিবাজারের মহম্মদ সাকিব জানান, তিনি কমলালেবু, বেদানা, আপেল বিক্রি করেন। তাঁর দোকানে আপেল বিক্রি হচ্ছে ঠিকই। তবে তাঁর পাশের বেশ কয়েকটি দোকানে কদর তরমুজ, শশা ও ডাবেরই। এ ছাড়া, আখের রসের বিক্রিও বাড়ছে বলে তাঁরা জানান। পাশাপাশি, রানিগঞ্জ-সহ খনি এলাকায় মাটির কুঁজো, মাটির বোতল, কল লাগানো মাটির কলসি দেদার বিক্রি হচ্ছে। সে সঙ্গে, আসানসোল বার্নপুর মোড় ও রানিগঞ্জের নেতাজি সুভাষ বসু রাস্তার পাশের দু’টি বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের দোকানের কর্মীরা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বিক্রি বেড়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। চাহিদা বেড়েছে ফ্যান এবং ওয়াটার কুলারেরও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারই ঘোষণা করেছেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ মে থেকে গ্রীষ্মের ছুটি দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তে খুশি সব পক্ষই। পাণ্ডবেশ্বর কলেজের অধ্যক্ষ জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় জানান, গত কয়েক দিনের মধ্যে চার জন পড়ুয়া ও দু’জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত তাই সময়োপযোগী। একই কথা বলছেন কলেজ পডুয়া ইন্দ্রনীল ঘটক, সঞ্জিতা রুইদাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সোমেশ্বর তফাদারেরা, অণ্ডালের বাসিন্দা এক চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ার অভিভাবক বিশ্বনাথ নায়কেরা। তবে রানিগঞ্জের পুরাতন এগারা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পড়ুয়া রিয়া বাউড়ি অবশ্য জানিয়েছে, ৭ মের মধ্যে একটি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা নিয়ে তার পরে ছুটি হলে ভাল হত।
এ দিকে, দাবদাহ থেকে বাঁচতে তরমুজ, শসা, আপেল, ডাবের জল খাওয়া খুবই উপকারী বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক সমরেন্দ্রকুমার বসু। পাশাপাশি, তিনি বলেন, “বেশি করে জল খেতে হবে। বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরে জল খেতে হবে।”