কালী-বিসর্জন কাঁপাল সাউন্ড বক্স, শব্দবাজি

কালীপুজো রাত, দিওয়ালিতেও বোতলের ছিপি খুলে তেমন বেরোতে পারেনি শব্দদৈত্য। কিন্তু ভাসানের রাতে দৈত্যের গায়ের জোরে ছিটকে বেরিয়ে গেল ছিপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
Share:

আলোর সঙ্গে রাস্তায় চলছে নাচ। নিজস্ব চিত্র।

কালীপুজো রাত, দিওয়ালিতেও বোতলের ছিপি খুলে তেমন বেরোতে পারেনি শব্দদৈত্য। কিন্তু ভাসানের রাতে দৈত্যের গায়ের জোরে ছিটকে বেরিয়ে গেল ছিপি।

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কালনা শহর জুড়ে তারস্বরে চলল ডিজে-র গান, দেদার বাজল সাউন্ড বক্স এবং মাইক। কান ঝালাপালা করা গানের সঙ্গে প্রকাশ্য রাস্তায় নাচতে নাচতে চলল মদ্যপান। প্রথম দু’দিন কম হলেই তৃতীয় দিনে শহরের এমন ছবি দেখে ক্ষুব্ধ কালনার বাসিন্দারা।

গত পাঁচ বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে কালীপুজো। এখন প্রায় আড়াইশো পুজো হয় শহর ও লাগোয়া এলাকায়। তবে বেশির ভাগই বাড়ির পুজো। তবে ক্লাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ির পুজোও এখন মাইক বাজিযে শোভাযাত্রা বের করে। জানা গিয়েছে, রবি ও সোমবার প্রায় দেড়শো প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত বিসর্জন চলবে বলেও জানা গিয়েছে।

Advertisement

সোমবার রাতে দেখা গিয়েছে পরপর ভ্যানে সাউন্ড বক্স, আলো, প্রতিমা বসিয়ে শোভাযাত্রা চলছে। কেউ কেউ আওয়াজ বাড়াতে সাউন্ড বক্সের সঙ্গে মাইকও লাগিয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে ব্যান্ডপার্টি। সন্ধ্যা আটটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত চলেছে এই দৃশ্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শোভাযাত্রায় ১০টা বেজে যাওয়ার পরেও শব্দবিধি ভেঙে চলছে দেদার নাচ। হিন্দি গানের তালে কোমর দোলাতে দেখা গিয়েছে স্কুল পড়ুয়া থেকে মহিলা-পুরুষ সবাইকে। অনেককে রাস্তাতেই ‘গলা ভিজিয়ে’ নিতেও দেখা গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্লাবের উদ্যোক্তারই দাবি, পুলিশের নজর এড়াতে ঠান্ডা পানীয়ের বোতলে মদ ঢেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফাঁক পেলেই তাতে ভিজছে গলা। নার্সিংহোম, হাসপাতালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়েও বাজনা, মাইকের বিরাম দেখা যায়নি। ১০৮ শিব মন্দির, পুরনো বাসস্ট্যান্ড, তেঁতুলতলা, শাহু সরকার মোড় সব জায়গায় দেখা গিয়েছে বিকট শব্দে মাইক।

বাজনা, বক্সের সঙ্গে জুটি বেঁধেছে শব্দবাজিও। জানা গিয়েছে, শহরের অনেক দোকানই কালীপুজোর আগে নিষিদ্ধ শব্দবাজি না এনে পরের দিন বা তার পরের দিন বরাত মতো তা মজুত করেছেন। এক দোকানদারের কথায়, ‘‘নিষিদ্ধ হলেও খরিদ্দারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে শব্দবাজির। তাই লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।’’ কালনা ১ এবং ২ ব্লকে রয়েছেন বেশ কিছু বাজি তৈরির কারিগর। বিকট শব্দের ‘বেলবোম’ নামে একটি বাজি সিদ্ধহস্ত তাঁরা। বিসর্জনের রাতে অনেক হাতেই দেখা যায় এই শব্দবাজি।

শহরের প্রবীণ বাসিন্দা অমিয় ঘোষ বলেন, ‘‘হার্টের অসুখে ভুগছি। যে ভাবে বিসর্জনে শব্দের দাপদাপি চলছে তাতে দু’রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি। জানি না কতদিন এমন পরিস্থিতি চলবে।’’ যদিও কালনা থানার এক আধিকারিক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘উৎসবের সময় সাধারণ মানুষের আমোদ প্রমোদে প্রথমে আমরা ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি। তবে খবর পেয়েছি কিছু কিছু জায়গায় বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বাড়াবাড়ি হয়েছে। সিভিক ভলেন্টিয়ারদের পাঠিয়ে বেশ কিছু পুজো উদ্যোক্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।’’ কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, পুরো ব্যাপারটাতেই নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement