Coronavirus n West Bengal

আরও ডাক্তার আক্রান্ত, চিন্তা পরিষেবায়

সোমবারও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ছ’জন ডাক্তারের রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি

এক চিকিৎসক করোনা-আক্রান্ত হচ্ছেন, নয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলছে। এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা বজায় রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এবং কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দু’টি হাসপাতালেই বিভিন্ন বিভাগের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে, রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা পড়ছেন দুশ্চিন্তায়।

Advertisement

সোমবারও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ছ’জন ডাক্তারের রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে। এক কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ১২ জন ডাক্তার ও তিন জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক, কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মানসিক ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের আউটডোর পরিষেবাও।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘একের পরে এক ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নিভৃতবাসে পাঠানো হচ্ছে। ফলে, পরিষেবা দেওয়া দিন-দিন দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। তবে কোনও রোগী না ফিরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। মানবিক দিক থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখারও চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

এ দিন সকালে এক কর্মীর রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসার পর থেকেই মানসিক বিভাগের আউটডোর বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী তিন দিন পুরো ওয়ার্ড জীবাণুমুক্ত করার জন্য বন্ধ থাকবে। একই পরিস্থিতি ফিজ়িক্যাল মেডিসিন বিভাগেও। বহু রোগী ফিরেও যান। কাটোয়ার কৃষ্ণা দাস, সাহাজাদপুরের ফরিদা শেখ, ভাতারের ভূমশোর গ্রামের নুরবানু মণ্ডলেরা জানান, আগাম কিছু না জানিয়ে ওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের ফিরে যেতে হচ্ছে। কী ভাবে ওষুধ মিলবে, তা নিয়ে বাড়ছে চিন্তা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ দিন প্রসূতি বিভাগের ছয় ডাক্তারের রিপোর্ট আসার পর থেকেই পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজতে হাসপাতালের সমস্ত বিভাগের প্রধানদের নিয়ে একটি বৈঠকও করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরিষেবা সচল রাখতে বিভিন্ন বিভাগ সংযুক্ত করা হবে। হাসপাতাল কর্তাদের কথায়, ‘‘মানসিক বিভাগের অনেক ওষুধ মেডিসিন বিভাগ দিতে পারবে। তাই মানসিক ওয়ার্ড বন্ধ থাকাকালীন মেডিসিন বিভাগ এই বাড়তি দায়িত্ব নেবে। আবার প্রসূতি বিভাগকে সাহায্য করবে সার্জারি বিভাগ।’’

কয়েকদিন আগে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি ও শিশু বিভাগে করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সংক্রমণ রুখতে রোগী ভর্তিতে রাশ টানাও হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় সোমবার থেকে প্রসূতি বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হল। তবে অতি জরুরি কোনও রোগী থাকলে অবস্থা বুঝে হাসপাতালেরই অন্য বিভাগে রেখে চিকিৎসা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শিশু বিভাগেও ভর্তিতে এ দিন থেকে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনে বিভাগ বন্ধ করা যেতে পারে, বলেও হাসপাতাল সূত্রের খবর।

কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দু’টি ওয়ার্ড জোরকদমে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সপ্তাহ খানেক পরে ওই দুই বিভাগে রোগী ভর্তি নেওয়া হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। কিন্তু খবর শুনে উদ্বেগে শিশু ও প্রসূতিদের পরিবার। রাতবিরেতে সমস্যায় পড়লে কী হবে, সে চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে অনেকের। হাসপাতালের সুপার রতন শাসমল বলেন, “করোনা-সংক্রমণ রোধে রোগীদের স্বার্থেই প্রসূতিদের আর ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। শিশু বিভাগেও ভর্তিতে নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে সমস্ত পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’

পূর্ব বর্ধমান ছাড়া, নদিয়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। সকাল থেকেই রোগীদের ভিড় জমে। বিশেষত প্রসূতি ও শিশু বিভাগে ভিড় লেগেই থাকে। এ দিন কেতুগ্রামের বাসিন্দা লাল্টু শেখ কাটোয়া শহরে এক ডাক্তারের কাছে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এনেছিলেন। তিনি বলেন, “সপ্তাহ দু’য়েক পরে প্রসবের সম্ভাব্য দিন জানিয়েছেন চিকিৎসক। আমরা গরিব মানুষ। হাসপাতাল ছাড়া, নার্সিংহোমে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। প্রসূতি বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব চিন্তায় পড়লাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement