চলছে কেনাকাটা। নিজস্ব চিত্র
শহরে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, কালনা শহরে সপ্তাহখানেকের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ জন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশঙ্কা, যে ভাবে পুজোর কেনাকাটার জন্য ভিড় জমছে বাজার-দোকানে, তাতে সংক্রমণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১২ জন করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, জ্বর-সহ নানা লক্ষণ দেখা দিলে কেউ-কেউ করোনা পরীক্ষা করাতে কালনা মহকুমা হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু শহরের বেশিরভাগ মানুষেরই পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে করোনা পরীক্ষার জন্য দু’টি শিবির চালু করা হলেও তেমন সাড়া না মেলায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।
শহরে সংক্রমণ বাড়ছে কেন? স্বাস্থ্য-কর্তাদের মতে, প্রতিবারই পুজোর সময়ে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, এমনকি, হুগলি ও নদিয়া জেলার একাংশের মানুষও বাজার করতে আসেন কালনা শহরে। গত সপ্তাহ দু’য়েক ধরে দোকান-বাজারে ভিড় জমছে। স্বাস্থ্য-বিধি না মেনেই অনেক দোকান, শপিংমলে কেনাকেটা করতে আসছেন। করোনা নিয়ে প্রশাসনিক প্রচার, তৎপরতা খানিক কমেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশেরও। তাঁদের দাবি, সে কারণে রাস্তাঘাটে অবাধে অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করছেন। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করার প্রবণতা তলানিতে ঠেকছে।
এলাকাবাসীর অনেকের আরও অভিযোগ, ইদানীং স্বাস্থ্য-বিধির কোনও রকম তোয়াক্কা না করেই রাজনৈতিক দলগুলি এলাকায় জমায়েত করে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে। প্রকল্পের উদ্বোধন থেকে প্রতিবাদ-আন্দোলন, বিভিন্ন পক্ষ নানা কারণে সমাবেশ করছে। রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের যদিও দাবি, জমায়েত না করেই কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে উৎসাহী কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয়ে যাওয়ায় ভিড় জমে যাচ্ছে।
কালনার বাসিন্দা কল্পনা সরকারের অভিযোগ, ‘‘কেউ স্বাস্থ্য-বিধি না মানলেও প্রশাসনের তরফে এখন আর কড়া পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। যে ভাবে শহরে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে না পুজোর মরসুমে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’’ কালনা মহকুমা হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাইও বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি না মেনে ভিড় জমছে নানা জায়গায়। ফলে, গোষ্ঠী সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই। মাস্ক পরার প্রবণতাও কমে এসেছে। এ ভাবে চললে বিপদ আরও বাড়তে পারে।’’
কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগের দাবি, সংক্রমণের হার কমাতে ও শহরের দোকান-বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। মহকুমাশাসক (কালনা) সুমনসৌরভ মোহান্তি বলেন, ‘‘শহরে সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কী ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’’