ঋষিতা মজুমদার। নিজস্ব চিত্র
পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে পছন্দ করেন তিনি। প্লাজমা থেরাপি গুরুতর করোনা রোগীর চিকিৎসায় কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছে আইসিএমআর। তবে সে সব আলোচনা তখনও সে ভাবে শুরু হয়নি। বিভিন্ন রাজ্যে এখনও চলছে প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা। এই পরিস্থিতিতেই দুর্গাপুরের কবিগুরু এলাকার তরুণী ঋষিতা মজুমদার রাজ্যের ‘প্রথম কোভিড জয়ী অবিবাহিত মহিলা’, যিনি গত সেপ্টেম্বরে করোনা চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে প্লাজমা দান করেছিলেন। এমনটাই দাবি বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠনের।
ঋষিতার বাবা অনিরুদ্ধবাবু চিকিৎসক। মা সোনালিদেবী ডিএসপি-র কর্মী। ঋষিতা দম্পতির ছোট মেয়ে। ডিএসপি টাউনশিপের একটি কনভেন্ট স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ও পরে জওহরলাল নেহরু রোডের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা ঋষিতার। পরে, দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে হায়দরাবাদের একটি তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করতে যান ঋষিতা।
লকডাউন-পর্বে বাড়ি ফেরেন তিনি। কিন্তু তার পরেই গত জুলাইয়ে করোনা আক্রান্ত হন ঋষিতা। গত ২৮ জুলাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৪ দিন নিভৃতবাসে কাটানোর সময়েই ঋষিতা ভাবেন, প্লাজমা দান করবেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবাকে ইচ্ছের কথা বললে, তিনি রাজি হন। খোঁজ নিতে শুরু করি, দুর্গাপুরেই প্লাজমা দান করা সম্ভব হবে কি না।’’ এর পরে পরিচিত একজনের কাছে ঋষিতা খবর পান, এমএএমসি টাউনশিপে রক্তদান শিবিরের সঙ্গে প্লাজমা দান করার ব্যবস্থা থাকছে। ৬ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সহযোগিতায় স্থানীয় দুই স্কুলের প্রাক্তনীদের সংগঠন ‘প্রচেষ্টা’ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। সেখানেই প্লাজমা দান করেন ঋষিতা। আসানসোল জেলা হাসপাতাল ব্লাড সেন্টারের ইনচার্জ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় এবং ‘ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশনস অব ইন্ডিয়া’-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সম্পাদক কবি ঘোষ তাঁর হাতে শংসাপত্র তুলে দেন। কবিবাবুর দাবি, ‘‘ঋষিতা রাজ্যের প্রথম অবিবাহিত মহিলা প্লাজমা ডোনার। করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের প্লাজমা দানে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার চলছে। ঋষিতার দৃষ্টান্ত অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’’
এই মুহূর্তে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ ব্যস্ত বছর ২৪-এর ঋষিতা বলছেন, ‘‘যে যে ভাবে পারি, সমাজের জন্য কিছু করা দরকার প্রত্যেকেরই। তা হলেই এই মহামারিকে রোখা যাবে।’’ মেয়ের এই প্রত্যয় তাঁদেরও প্রেরণা জোগায়, জানান ঋষিতার বাবা-মা।
(শেষ)