ফাইল চিত্র
নির্দেশিকা এসে না পৌঁছনোয় মঙ্গলবারও জেলায় খোলা রইল প্রায় সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। এলাকার বাসিন্দাদের ‘চাপে’ পরে কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ করে দেন কর্মী-সহায়িকারা। কেন্দ্র খুললেও শিশুদের উপস্থিতির হার বেশ কম ছিল বলে দাবি অনেক কেন্দ্রের কর্মীদের। নির্দেশিকা এসে পৌঁছনোর পরে কী ভাবে বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে, তা নিয়ে অবশ্য চিন্তায় অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা। তাঁদের দাবি, সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে এই কাজ কতটা করা যাবে, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৬,৮৫৩টি। সেখান থেকে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষ ৫৩ হাজার শিশু পরিষেবা পায়। প্রসূতি ও গর্ভবতী মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার মহিলা পুষ্টিকর খাবার ও ওষুধ পেয়ে থাকেন। মঙ্গলবার কেন্দ্র খোলা থাকলেও বেশিরভাগ জায়গায় শিশুদের উপস্থিতি কম ছিল বলে নানা অঙ্গনওয়াড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে।
গলসির বাবলা গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৪১ জন শিশুর মধ্যে ছ’জন হাজির ছিল। পাশের ভারিচা গ্রামেও ৪৩ জনের মধ্যে সাত জন শিশু এসেছিল। একই রকম চিত্র ভাতার, রায়না ২, জামালপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির কর্মী-সহায়িকাদের দাবি, রাজ্য সরকারের নির্দেশ তাঁদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের আধিকারিকেরাও (সিডিপিও) অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধের কোনও নির্দেশ দেননি। সে জন্যই অন্য দিনের মতো অঙ্গনওয়াড়ি খুলেছিলেন বলে কর্মী-সহায়িকাদের দাবি।
এরই মধ্যে কী ভাবে উপভোক্তাদের বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছনো হবে, সেই প্রশ্নের মুখে পড়ছে আইসিডিএস দফতর। বিভিন্ন সংগঠনের নেত্রীরা দাবি করেন, নির্দেশ এলে ‘খাতায়-কলমে’ তাঁরা মানতে বাধ্য। কিন্তু তা মানার মতো পরিকাঠামো রয়েছে কি না, সে নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, জেলায় দীর্ঘদিন অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী-সহায়িকা নিয়োগ হয়নি। জেলার ৬৯২টি কেন্দ্রে কর্মী নেই। ১,৩০৪টি কেন্দ্রে সহায়িকা নেই। দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১,৯৯৬টি কেন্দ্র চলছে এক জনের উপরে নির্ভর করে।
বিভিন্ন সংগঠনের নেত্রীদের প্রশ্ন, এক-একটি কেন্দ্রে গড়ে ৪২ জন করে শিশু ও প্রসূতি-গর্ভবতী রয়েছেন। দু’জনের পক্ষে কী ভাবে বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব? শাসকদলের সংগঠনের এক নেত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমরা একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির আর্জি জানিয়েছি। তা না হলে খাবার নিয়ে গোটা গ্রাম ঘুরতে হবে কর্মী-সহায়িকাদের। শহরাঞ্চলে আরও সমস্যা। কী ভাবে খাবার নিয়ে যাওয়া হবে, সেটাও স্পষ্ট করে জানাতে বলেছি।’’ এক কর্মীর কথায়, ‘‘পুষ্টিকর খাবার বাড়িতে পৌঁছতে গিয়ে গুণমান খারাপ হতে পারে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’’
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের অনেকে আবার মনে করছেন, সরকারি নির্দেশমতো বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছতে না পারলে জেলায় দরিদ্র পরিবারের শিশু ও প্রসূতিরা বঞ্চিত হবেন। বর্তমান পরিকাঠামোয় কী ভাবে এই কাজ করা সম্ভব, সেটাই এখন ভাবা হচ্ছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী শুধু বলেন, “রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হবে।’’