ফাইল চিত্র
পাঁচ পুরসভা ও বর্ধমান শহর লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় আগেই থেকেই চালু ছিল। মঙ্গলবার বিকেল থেকে সারা রাজ্যের মতো গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় শুরু হল ‘লকডাউন’। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘোষণা হওয়ার পরেই জেলার নানা গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা এই ক’দিন সংসার চালানো নিয়ে চিন্তায় পড়েন। এই পরিস্থিতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কালোবাজারি বাড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের অনেকের।
জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে পূর্ণ নিরাপত্তা বিধিনিষেধ জেলা জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে। বিডিওদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। প্রচার চালানো হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘আমরা গ্রামে-গ্রামে নজরদারি শুরু করেছি। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কালোবাজারি রুখতে আরও বেশি অভিযান চালানো হবে।’’
করোনা রুখতে গোটা রাজ্যে ‘লকডাউন’ করার কথা ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই নির্দেশিকা জারি হয়ে গিয়েছে। এর আগে রাজ্য সরকার পূর্ব বর্ধমানে বর্ধমান, কাটোয়া ও কালনা শহর ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছিল। পরে জেলাশাসক বিজয় ভারতী গুসকরা, মেমারি ও বর্ধমানের তিনটি বাজার এলাকায় ‘পূর্ণ নিরাপত্তা বিধিনিষেধ’ চালু করেছিলেন। পুর এলাকা দাঁইহাট-সহ জেলার বাকি এলাকায় কী ভাবে বিধিনিষেধ জারি করা যাবে, তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠকও করেছিলেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারের নির্দেশিকা না মানার জন্য মঙ্গলবার জেলায় প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছিল। জেলা জুড়ে এই রকম পদক্ষেপ করা হবে এ বার। তাতেও কাজ না হলে গ্রেফতার করা হবে। এ দিনই কালনা মহকুমার চারটি থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে জোরকদমে প্রচার শুরু হয়েছে। কাটোয়া মহকুমার তিনটি থানাও প্রচার করছে। মোটরবাইক, গাড়ির চাপ কমাতে বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করা হয়েছে। মেমারির সাতগেছিয়া বাজারে জমায়েত করে আড্ডা দেওয়ায় পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করেছে। জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, আজ, বুধবার থেকে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
‘লকডাউন’ ঘোষণার পরে, কালনার ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা গোপাল বসাক, মেমারির সাতগেছিয়ার সাগর দাসেরা অভিযোগ করেন, ‘‘করোনার হাত থেকে বাঁচতে এ ছাড়া, কোনও উপায় নেই। কিন্তু এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়াবে কি না, সেটাই চিন্তা। ইতিমধ্যে ডিমের জোগান কমতে শুরু করেছে।’’ গলসির ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক বজরুল রহমান মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘এ রকম সিদ্ধান্ত হবে আঁচ করে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।’’
কাটোয়ার সাহাপুরের বকুল দত্ত, জামালপুরের আঝাপুরের ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ আশদের কথায়, ‘‘আগে তো কোনও দিন এ রকম হয়নি। হঠাৎ সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসুবিধা তো হবেই।’’ জামালপুরের গোপাল মুর্মু, গলসির আসরিফা বেগমদের কথায়, ‘‘কাজ না থাকলে আমাদের একবেলা পেট চালানো মুশকিল। সেখানে সাত দিন কাজ বন্ধ থাকবে। কী ভাবে সংসার চালাব, বুঝতে পারছি না। সরকারি সাহায্য পেলে সুবিধা হয়।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী অসংগঠিত শ্রমিকদের এককালীন এক হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাস্তায় আড্ডা দেওয়া, খেলাধুলো করায় নিষেধ করা হয়েছে। প্রচার, জনসভা, আলোচনাচক্র, মেলা, অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। সাত জনের বেশি লোক এক সঙ্গে থাকাও নিষিদ্ধ। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘সবাইকে বিধিনিষেধ মানতে বলা হয়েছে।’’