পরিদর্শন: হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখছেন আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র
মেয়াদ উত্তীর্ণ সামগ্রী ও নিম্নমানের আনাজ দিয়ে রোগীদের খাবার তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। বৃহস্পতিবার কালনা মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শনে যান তিনি। হাসপাতাল চত্বর, রান্নাঘর ঘুরে দেখেন। হাসপাতালে পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যায়নে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিন হাসপাতাল পরিদর্শনে মহকুমাশাসকের সঙ্গে ছিলেন সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই, কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। আধিকারিকেরা আচমকা রান্নাঘরে যান। সেখানে মশলা পরীক্ষা করতে গিয়ে মহকুমাশাসকের নজরে পড়ে, এক বছর আগে মেয়াদ ফুরনো প্যাকেটের হলুদের গুঁড়োয় রান্না চলছে। আনাজ পরীক্ষা করে তিনি দেখেন, পোকা বেগুন আনা হয়েছে বাজার থেকে। কেন এমন জিনিসপত্রে রান্না হচ্ছে, সুদত্তর দিতে পারেনি ঠিকাদার সংস্থার লোকজন। এর পরেই মহকুমাশাসক হাসপাতাল সুপারকে দ্রুত খাবার সরবরাহকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘রোগীদের খাবারের সঙ্গে কোনও আপস নয়। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সুপার বলেন, ‘‘খাবার সরাবরাহের সঙ্গে যুক্ত দু’জনকে দ্রুত শো-কজের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই সংস্থাকে দিয়ে খাবার সরাবরাহের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।’’
দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতাল চত্বরের নানা জায়গা অপরিষ্কার রয়েছে। দুই ও তিন নম্বর দরজার সামনে আগাছাও হয়েছে। এই নালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার হয় না বলে অভিযোগ। সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সাফাইয়ের হাল দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। এ ছাড়া রোগীর আত্মীয়দের জন্য বিশ্রামের ভাল জায়গা, বিশুদ্ধ পানীয় জল, গাড়ি রাখার মতো নানা পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে এই হাসপাতালে। এই সবের সমাধানে কালনা পুরসভার তরফে একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি পরিকল্পনাগুলি রূপায়নের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই টাকায় এইচডিইউ এবং এসএনসিইউ বিভাগের মাঝে রোগীর পরিজনদের জন্য একটি আধুনিক বিশ্রামাগার তৈরি করা হবে। পুরুষ ও মহিলা শল্য বিভাগের শৌচাগারগুলি সংস্কার, প্রতিবন্ধীদের সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতাল চত্বরে তিনটি পুকুর রয়েছে। তার পাড়গুলি সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে। হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে তৈরি হবে ভেষজ উদ্যান। এ ছাড়া ১ ও ২ নম্বর গেটের নানা জায়গায় তৈরি হবে ফুলের বাগান। হাসপাতালে ঢোকার মুখে বেআইনি দখলদার সরিয়ে দরজার পরিসর বাড়ানো হবে। ফুটপাথও চওড়া করা হবে। এ ছাড়া গাড়ি রাখা, জামাকাপড় শুকোনোর জায়গা, নলকূপ তৈরি-সহ বেশ কিছু পরিকল্পনা হয়েছে।
ওই পরিকল্পনা রূপায়ণের বিষয়েই এ দিন হাসপাতাল ঘুরে দেখেন মহকুমাশাসক-সহ কর্তারা। মহকুমাশাসক জানান, দ্রুত পরিকল্পনা রূপায়নের কাজ শুরু হবে। আপাতত ৫০ লক্ষ টাকায় কাজ শুরু হবে। পরে আরও অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা হবে। সুপার বলেন, ‘‘কাজ শেষ হলে হাসপাতালের চেহারাই পাল্টে যাবে। আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যাবে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের।’’