মিষ্টি হাবে কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
শুরু থেকেই মিষ্টি হাব নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসন।
জমি জট কাটিয়ে হাব তৈরির পরে একপ্রস্ত দোকান বিলি হয়। তার পরে দেড় বছর কেটে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্পের অধিকাংশ দোকানেরই ঝাঁপ বন্ধ। ফলে, মিষ্টিই পাওয়া যায় না মিষ্টি হাবে।
আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে ফের মিষ্টি হাবকে চাঙ্গা করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ওই হাবের দোতলায় দশ জনকে ব্যবসা করার জন্য জায়গাও দেওয়া হয়েছে।
গোড়াতেই জমি-সমস্যায় ফেঁসে গিয়েছিল মিষ্টি হাব। কাঞ্চননগরে হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানান। তখন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জায়গা বাছে জেলা প্রশাসন। সেখানে জমিদাতারা আন্দোলনে নামলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জমিদাতারা না চাইলে ওই এলাকায় মিষ্টি হাব হবে না। এরপরে অনাময় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পাশে ২৭ কাঠা জমির উপর একটি জমি বাছা হয়। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর মিষ্টি হাব তৈরির জন্য প্রথম ধাপে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। তাতে ১৭টি দোকান ঘর ও একটি বড় হল ঘর তৈরি হয়েছে। গত বছরের ৭ এপ্রিল আসানসোল থেকে মিষ্টি হাবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এই দেড় বছরে দোকান খোলা রয়েছে মাত্র একটি। মিষ্টি ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘রাজ্যের বিখ্যাত মিষ্টি বর্ধমানের এই হাবে পাওয়ার কথা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় সে রকমই বলেছিলেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, পাড়ার দোকানে যে মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে, এই হাবেও তাই মিলছে। এমনকি, বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ-মিহিদানাও পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতারা গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাবের দুর্দশা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, শক্তিগড়ে ‘ল্যাংচা হাব’ রয়েছে। ফলে শক্তিগড় থেকে দু’আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে মিষ্টির কিনতে আর কোনও গাড়ি এখানে দাঁড়াতে চায় না। আবার দাঁড়ালেও যথেষ্ট গাড়ি রাখার জায়গা নেই। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর গাড়ি রাখার ঝক্কিও কেউ নিতে চান না। ওই অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা প্রমোদ সিংহের দাবি, ‘‘গাড়ি রাখার জায়গা করতে হবে। ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও নজর রাখতে হবে।’’
মিষ্টি হাবের সামনেটা এক সময় সাজিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তার বর্তমান অবস্থাই বলে দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্পের কী দশা। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘আপাতত মিষ্টি হাবের পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও উদ্যোগী হওয়ার জন্য বলেছি। তাঁরা আমাদের কাছে অনেকগুলি দাবি করেছেন, সেই সব দাবি মানা হবে বলেও জানিয়েছি। কিন্তু আগে দোকান খুলতে হবে।’’
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হাবের দোতলায় ২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ভবন তৈরির কাজ চলছে। ওই কাজ চলাকালীন মিষ্টি বা খাবারের দোকান খোলা সম্ভব নয়। জেলাশাসকের আশ্বাস, এ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সুতরাং, নতুন বছর থেকে মিষ্টি হাব রকমারি মিষ্টিতে, ক্রেতাদের ভিড়ে ভরে থাকবে এমন আশাই করছেন কর্তারা।