ভেঙেছে জোট, কালনায় সব আসনে প্রার্থী নেই কংগ্রেসের

দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী এখন রাজ্যের শাসক। দলের ৫ জন কাউন্সিলর জার্সি পাল্টে শাসক শিবিরে। তার পরেও প্রতিটি ওয়া়র্ডে লড়াই দেবে দল। এমনই আশা করেছিলেন কালনা পুরসভার কংগ্রেস কর্মীরা। কিন্তু মনোনয়ন পেশ শেষ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ১৮টি ওয়া়র্ডের মধ্যে ১১টিতে হাত চিহ্নের কোনও প্রার্থীই নেই। কালনা পুর এলাকায় কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক বহু পুরনো। ১৯৯৫ সালে কালনা পুরসভার নির্বাচনে ১৮টি আসনের মধ্যে ১১টি জিতেছিল সিপিএম।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৬
Share:

জোরকদমে ভোটের প্রচার কালনায়। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী এখন রাজ্যের শাসক। দলের ৫ জন কাউন্সিলর জার্সি পাল্টে শাসক শিবিরে। তার পরেও প্রতিটি ওয়া়র্ডে লড়াই দেবে দল। এমনই আশা করেছিলেন কালনা পুরসভার কংগ্রেস কর্মীরা। কিন্তু মনোনয়ন পেশ শেষ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ১৮টি ওয়া়র্ডের মধ্যে ১১টিতে হাত চিহ্নের কোনও প্রার্থীই নেই।

Advertisement

কালনা পুর এলাকায় কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক বহু পুরনো। ১৯৯৫ সালে কালনা পুরসভার নির্বাচনে ১৮টি আসনের মধ্যে ১১টি জিতেছিল সিপিএম। বাকি ৭টি গিয়েছিল কংগ্রেসের ঝুলিতে। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর দু’দলের মধ্যে জোট তৈরি হয়। ২০০০ সালের পুরভোটে বামেরা ১১টি আসন পেয়েছিল। জোট করে ভোটে লড়ে কংগ্রেস ৫টি এবং তৃণমূল ২টি আসন পায়। ২০০৫ সালের ভোটে এই একই ফল হয়। জোট সফলতা পায় ২০১০ সালে। এ বার তৃণমূল ৭টি ও কংগ্রেস ৫টি আসন পায়। যদিও পরে কংগ্রেসের ৫ জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৫ সালের পুরভোট ঘোষণার পরেও কংগ্রেস-তৃণমূল আসন সমঝোতার কথা উঠেছিল। যদিও সেই আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি। তৃণমূল সব ওয়ার্ডে একক ভাবে প্রার্থী দিচ্ছে এ কথা জানার পরে বুথ স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে বলে কংগ্রেস। প্রথমে ১২টি আসনে মনোনয়ন পেশ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ জন প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে এই প্রথম কালনা পুরভোটে সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না এই শতাব্দী প্রাচীন দলটি।

শহর কংগ্রেসের নেতৃত্বের আক্ষেপ, দীর্ঘদিন আন্দোলনের মধ্যে না থাকার জন্য দলের নিচুতলার কর্মীরা ক্রমশ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর নিরাপত্তার আশায় অনেকেই দল বদলেছেন। তৃণমূলের সঙ্গে জোটে থাকার জন্যই সংগঠনে ধস নেমেছে। দল না ছাড়লেও পুরসভায় জোট ক্ষমতায় থাকার ফলে এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে অনেক কংগ্রেস কর্মীর ব্যক্তিগত সখ্যতা তৈরি হয়েছে। সেই ‘বন্ধুত্ব’ ভেঙে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পথে নামতেও অনেকের অনীহা রয়েছে বলে শহর কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দাবি। কালনার কংগ্রেস নেতা লক্ষ্মণ রায় বলেন, ‘‘সব ওয়ার্ডে যে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার মত পরিস্থিতি নেই তা নয়। কিন্তু ওয়া়র্ড ভিত্তিক নেতৃত্বের অভাবের কারণেই আমরা সেটা পারিনি।’’ মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূল হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েও নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবকের দাবি, ‘‘তৃণমূলের চাপ ছিল। দলের যা অবস্থা তাতে বিপদে পড়লে কাকে কতটা পাশে পাওয়া যাবে সেটি নিয়েও সন্দেহ ছিল। তাই ঝুঁকি নিতে চাইনি।’’

Advertisement

যদিও হুমকির অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল। দলের কালনা পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক দেবু টুডুর দাবি, ‘‘কোথাও কোনও প্রার্থীকে কোন ভাবে চাপ দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু নিজেদের দল নিয়েই ভাবি।’’ কালনা শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দেবপ্রসাদ বাগ আগের বার কংগ্রেসের কাউন্সিলর ছিলেন। দু’বছর আগে তিনি দল বদলান। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের অনেকেই চান না যে কালনা পুরসভায় সিপিএম বাড়তি কোনও সুবিধা পায়। তাই ভোট কাটাকাটি রুখতে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’’

এই কঠিন পরিস্থিতিতে লড়তে নেমে সংখ্যায় কম হলেও কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন ও ফেস্টুন অবশ্য চোখে পড়েছে। ছোট ছোট মিছিল করে কয়েকটি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। দলের ৭ নম্বর ওয়া়র্ডের প্রার্থী গোপাল সাহার দাবি, ‘‘সারা রাজ্যের মত কালনাতেও দল সঙ্কটে রয়েছে। তবে যে কটি ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থী রয়েছে সেখানে জোরদার লড়াই হবে। বিনা যুদ্ধে আমরা তৃণমূলকে এক ছটাক জমিও ছাড়ব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement