তাহাদের কথা
Finance commission

দুই পঞ্চায়েতের টাকা খরচ নিয়ে টানাপড়েন

পঞ্চায়েত নির্বাচনের বছর পার। পূর্ব বর্ধমানের মাত্র চারটি পঞ্চায়েত রয়েছে বিরোধীদের হাতে। বাকি সবই তৃণমূলের দখলে। বিরোধী পঞ্চায়েতগুলির অবস্থা কেমন, প্রকল্পের টাকা ঠিকমতো আসছে কি না, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ থেকে সাহায্য মিলছে কি না, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ শেষ পর্ব।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ০৯:০৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

তৃণমূলের দাবি, টাকা পেয়েও খরচ করতে পারছে না বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত। বিজেপির পাল্টা দাবি, অর্থের অভাব এবং উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করছে না তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি। বিজেপির দখলে থাকা পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলা ১ এবং পাটুলি পঞ্চায়েতের পরিচালনা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে।

Advertisement

কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতের ৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১৬টি। দশটিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। চারটিতে সিপিএম। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে এই পঞ্চায়েত ৪২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পেয়েছে। খরচ করেছে ৯ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। পড়ে রয়েছে ৩২ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। বরাদ্দের নিরিখে খরচ মাত্র ২৩.৯ শতাংশ।

পঞ্চায়েত প্রধান পঙ্কজ দে-র দাবি, ‘‘সাদা বালির অভাবে নিকাশি নালা-সহ বেশ কিছু কাজ করা যাচ্ছে না। সাদা বালির জোগানের অভাবের কথা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শেষ হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এনআরইজিএস, আইএসজিপি তহবিলে টাকা মিলছে না। নিজস্ব তহবিলেও টাকা তেমন নেই। ইচ্ছা থাকলেও মানুষের অনেক দাবি পূরণ করতে পারছে না পঞ্চায়েত। অর্থের অভাবে নলকূপ সারাতেও সমস্যা হচ্ছে। বর্ষা এসেছে। মানুষ ত্রিপল চাইলে দেওয়ার সাধ্য নেই। সাহায্য করা যাচ্ছে না প্রতিবন্ধীদেরও।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে থাকায় সেখান থেকে সাহায্য মিলছে সামান্য। বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার কাজও বেশি দূর এগোয়নি।’’ কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা পূর্ণ সাহা বলেন, ‘‘২০১৯ সালে তৃণমূল বোর্ডের ক্ষমতায় থাকাকালীন শৌচাগার তৈরির জন্য ৯০০ টাকা জমা নিয়েছিল। কিন্তু আজও শৌচাগার হয়নি। বিজেপি পরিচালিত বোর্ড টাকা ফেরত দেবে বলেছে।’’

Advertisement

পাটুলি পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের বিজেপির দখলে রয়েছে ন’টি। চারটি তৃণমুলের দখলে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই পঞ্চায়েত পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে ২৬ লক্ষ ৮ হাজার টাকা পেয়েছে। খরচ হয়েছে ১১ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দেবব্রত রায়ের দাবি, ‘‘পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিলে পড়ে রয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। একটি জলপ্রকল্প এবং রাস্তার কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে। ফলে ওই অর্থ বেশি দিন পড়ে থাকবে না।’’ তাঁর দাবি, উন্নয়নে পঞ্চায়েত সমিতির তেমন সাহায্য মিলছে না। ঘাটের ইজারা বাবদ আসা অর্থ জমা হয় পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলে। সাধারণ মানুষের কাজে তা লাগানো হয়। এই তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা মধু ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি পরিচালিত বোর্ড আহামরি কিছু করতে পারেনি। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে।’’

এই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নির্বাচিত বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রতাপ সূত্রধরের অভিযোগ, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আমাকে ডাকা হয় না। জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল থেকে পঞ্চায়েত এলাকায় অর্থবরাদ্দ হয় না। একটি রাস্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ পঞ্চায়েত প্রধান ঝর্না হালদারের কথায়, ‘‘যে সামান্য অর্থ মেলে, তা দিয়েই উন্নয়নের চেষ্টা করি। মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রয়োজন পঞ্চায়েত সমিতির বরাদ্দ। তা পাচ্ছি না।’’

বিজেপির অভিযোগ মানতে নারাজ পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘অর্থ কমিশনের দেওয়া টাকা বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি এখনও খরচ করতে পারেনি। কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েত এলাকায় ২৫ লক্ষ টাকা এবং ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে দু’টি রাস্তা তৈরি করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। সরডাঙা এলাকায় ১৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা খরচে আর একটি রাস্তা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। পঞ্চায়েত দু’টির তরফে পরিকল্পনা জমা দিলে তা রুপায়ণ করা হবে।’’

মহকুমাশাসক (কালনা) শুভম আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘‘সরকারের বরাদ্দ অর্থ ফেলে রাখা যাবে না। পঞ্চায়েত যদি সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, তবে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে প্রশাসন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement