আবিদার ভাইফোঁটা। নিজস্ব চিত্র
আমিনুল, ইনজামামূলের কপালে চন্দনমাখা আঙুল ছুঁইয়ে গড়গড় করে বলতে শুরু করলেন আবিদা খাতুন, ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা / যমুনা দেয় যমকে ফোটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা’। খুশি উপছে পড়ল তিন জনের চোখমুখে। বাড়ির অন্যদেরও।
এই দিনটায় উদাস হত আবিদার মন। বন্ধুদের বাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান দেখে আমিনুলদেরও মন কেমন করত। মনে লুকিয়ে রাখা ইচ্ছে এ বার বড়দের কাছে পেড়ে ফেলেছিলেন আবিদা। সবাই যেন এর প্রতীক্ষাতেই ছিলেন! ছেলেমেয়ের সঙ্গে তাঁরাও হইহই করে উৎসব পালনে নেমে পড়লেন। ভাইফোঁটাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার জমিয়ে খাওয়াদাওয়াও হল।
আমিনুল-ইনজামামূলের বাবা ইনামুল হক পেশায় ঠিকাদার। বাড়ি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই কৃষ্ণপুর গ্রামে। বড় ছেলে আমিনুল বিএএলএলবি পড়ছেন। ছোট ছেলে ইনজামামূল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। পাশের বাড়ির আবিদার সঙ্গে তাঁদের ভাই-বোনের সম্পর্ক। ভাইফোঁটা উপলক্ষে দশকর্মা ভাণ্ডার থেকে ধান-দুর্বা, চন্দন, তেল-সিঁদুর কিনে আনা হয়েছিল। মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়।
আবিদা এমএ, বিএড। ভাল ছবিও আঁকেন। বাবা মহম্মদ মহিউল্লা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। মা আসমিনা খাতুন গৃহবধূ। আনিমুল এবং তাঁর স্ত্রী সেলিনাকে আবিদা মামা-মামিমা ডাকেন। ফোঁটা দেওয়ার পরে উচ্ছ্বসিত তরুণী বলছেন, ‘‘আমরা দুই বোন। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমাদের ভাই নেই। ওদের ভাইফোঁটা দেওয়ার কথা প্রতিবারেই ভাবতাম। ফোঁটা দিয়ে মন ভরে গেল। সম্পর্ক আরও দৃঢ়, মজবুত হল মনে হচ্ছে।’’ আপ্লুত দুই ভাইও। আমিনুলের কথায়, ‘‘বন্ধুদের দেখতাম, ভাইফোটায় সেলিব্রেট করতে। আজ সেই অভিজ্ঞতা আমারও হল। দুর্দান্ত অনুভূতি।’’
ইনামুল ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরোধী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভাই-বোনের ভালবাসা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ভাইফোঁটা ভাইবোনের আন্তরিক মিলনের জায়গা, বছরে অন্তত এক বার। ভাই-বোনের মধ্যে মনোমালিন্য হলেও এমন অনুষ্ঠানে মিলিত হলে সবাই সব ভুলে যেতে পারে। এটাই বাংলার সংস্কৃতি, লোকাচার। ধর্মের দিক থেকে দেখলে, এর পরিসর ছোট করে দেওয়া হয়।’’ ভাইবোনের ভালবাসা বিনিময়ের দিনে দুই পরিবার একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সকালে ডালপুরি, ঘুগনি, চিলি চিকেন, মিষ্টি। দুপুরে পোলাও, মুগ ডাল, দই-পটল, মুরগি ও খাঁসির মাংস, দই-মিষ্টি, পাপড়, ঠাণ্ডা পানীয়। কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া চলল।