বাঁ দিকে, চলছে পুনর্মিলন উৎসব। ডান দিকে, উপাচার্যকে এই চিঠিই পাঠানো হয়। নিজস্ব চিত্র
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আয়োজিত হল প্রথম পুনর্মিলন উৎসব। অথচ, ‘উৎসব আয়োজন সমিতি’ একটি চিঠি পাঠিয়ে উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীকে সেখানে আসতে কার্যত নিষেধ করে বলে দাবি। ঘটনা হল, উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং ‘রেজিস্ট্রারকে’ বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে টানা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও আধিকারিকদের বিক্ষোভ চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই চিঠি তারই ‘রেশ’ কি না, তা নিয়েজল্পনা রয়েছে।
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়া, শিক্ষক, গবেষক মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন যোগ দিয়েছিলেন। হয় অনুষ্ঠানও। তবে চর্চায় ছিল ওই চিঠিটি। সে চিঠিতে উৎসবের জন্য সম্মতি প্রদান করায় উপাচার্যকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানানো হয়েছে। তবে তাতেই সংযোজন: ‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমাদের মনে হয়েছে, বিভাগের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং সর্বোপরি আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ কারও কাছেই আপনার উপস্থিতি একেবারেই কাঙ্ক্ষিত এবং অভিপ্রেত নয়।’
তবে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, উপাচার্যের দাবি, তিনি জেনেছেন, বাংলা বিভাগের প্রধান উত্তম মণ্ডল সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, এ চিঠি তিনি পাঠাননি। সাধনের সংযোজন: “তা হলে কি উনি এই অনুষ্ঠানের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। তা যদি হয়, তবে এ কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ করবেন।” উত্তমের সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি, “অনুষ্ঠানের জন্য আমিই অনুমতি নিয়েছিলাম। উৎসবের আয়োজন করেছে উৎসব সমিতি। চিঠিও তারাই দিয়েছে।” বাংলা বিভাগেরই শিক্ষক অভিজিত সাধুখাঁ-ও বলেন, “প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সবাই উৎসব সমিতির সদস্য। সবার সম্মতিতে সমিতিই চিঠি পাঠিয়েছে।”
এ দিকে, লাগাতার আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে রয়েছেন ওয়েবকুপার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সজল ভট্টাচার্য। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওই বিভাগের সঙ্গে আমি যুক্ত নই। কিন্তু বেশ কয়েক দিনের মধ্যে উপাচার্য সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও ধারণা পাল্টে গিয়েছে। তাই ওঁকে না আসতে বলাটা ঠিক সিদ্ধান্ত।”
এই পদক্ষেপের কার্যত বিরোধিতা করেছে বিরোধী শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা। সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পুনর্মিলন উৎসবে উপাচার্যকে আসতে নিষেধ করার অর্থ, উপাচার্য পদটিকে অপমান করা।” তাঁর সংযোজন: “উপাচার্য বৈধ নন, এটা উচ্চশিক্ষা দফতর জানায়নি। তা হলে তাঁকে অস্বীকার করে অচলাবস্থা তৈরিটাও মানা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের এ বার পদক্ষেপ করা দরকার। তবে নির্দিষ্ট দাবি নিয়ে আন্দোলন চলতেই পারে।”