ফের আবর্জনা পড়ছে গ্রাউন্ডে। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর ধমকে কেমন কাজ হয়, হাতেনাতে প্রমাণ পেল বর্ধমান শহরের বাসিন্দারা। শনিবার সকাল থেকেই শহরের আবর্জনা পড়তে শুরু করেছে পুরসভার নিজস্ব ডাম্পিং গ্রাউন্ডে।
মাস তিনেক ধরে শহরের আবর্জনা ফেলা নিয়ে টালবাহানা চলছিল পুরসভার অন্দরে। একশো বছরের পুরনো ডাম্পিং গ্রাউন্ড একটি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছিল পুরসভা। ফলে, সেখানে আবর্জনা ফেলা যাচ্ছিল না। যা নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। বিভ্রান্ত ছিলেন পুর-সদস্যেরাও। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের সঙ্গে তাঁদের কয়েক জনের এই কারণে দূরত্বও তৈরি হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে বিশদ রিপোর্ট গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, শুক্রবার প্রশাসনিক সভা শুরুর পরেই মুখ্যমন্ত্রী পুরপ্রধানের কাছে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বিষয়টি জানতে চান। মাইক হাতে পুরপ্রধান আমতা-আমতা করতে থাকেন। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড কি প্রমোটারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে? বিক্রি করে দিয়েছেন?’’ পুরপ্রধান জানান, বিক্রি হয়নি, জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।’’ যা শুনে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সেটাও তো বিক্রি করা। পুরসভার সম্পদ নিয়ে এ সব একদম চলবে না।” ওই সভা থেকেই রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসকে বিষয়টি দেখতে বলেন।
প্রশাসনিক সভার পরে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের (বিডিএ) সভা ঘরে পুরপ্রধান ও পুরপিতা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অরূপবাবু। সেখানেও ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কথা ওঠে। পুরসভা সূত্রের খবর, পুরপ্রধান দাবি করেন, ব্রিটিশ আমলের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা জমে পাহাড় তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আবর্জনা রাস্তায় চলে আসছিল। বাসিন্দারা আবর্জনা ফেলতে দিচ্ছেন না। সে জন্যই হস্তান্তর করতে হয়েছে। এ কথা শুনে অরূপবাবুর সামনেই বেশ কয়ে জন পুরপিতা ক্ষোভ উগরে দেন। সভায় অরূপবাবু সাফ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পুরসভার সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান-কালনা রোডের ধারে কৃষি খামারের কাছে পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডটি প্রায় একশো বছরের প্রাচীন। আবর্জনা জমতে-জমতে বহুতল বাড়ির উচ্চতা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পুরসভার গাড়ি ঢুকতে অসুবিধায় পড়ত বলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সামনেই আবর্জনা ফেলে দিতেন কর্মীরা। সেই আবর্জনা রাস্তায় এসে পৌঁছত। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বাসিন্দাদের নাকে রুমাল চাপা দিতেন। এ নিয়ে বাসিন্দারা একাধিক বার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আবর্জনার গাড়ি পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বাম আমলে ওখানে একটি জৈব সারের কারখানা তৈরির কথা হয়েছিল। তৎকালীন পুরবোর্ড দাবি করেছিল, বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির প্রকল্পের জন্য দরপত্র ডেকেও কোনও সংস্থার দেখা মেলেনি। তৃণমূলের পুরবোর্ড অবশ্য সে পথে না হেঁটে ডাম্পিং গ্রাউন্ড ‘হস্তান্তর’ করার সিদ্ধান্ত নেন।
পুরকর্তারা জানান, কয়েক মাস আগে একটি সংস্থার হাতে ২০ বিঘা জমির ডাম্পিং গ্রাউন্ডটি তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার বদলে সমমূল্যের জমি পাওয়ার কথা ছিল পুরসভার। কিন্তু ওই সংস্থার কাছ থেকে একটি চালকল মিললেও আবর্জনা ফেলার কোনও জমি পায়নি পুরসভা। ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কিছুটা দূরে পলাশি কিংবা খণ্ডঘোষের পলেমপুরে নদীর ধারে আবর্জনা ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় পিছিয়ে আসে পুরসভা। কয়েক দিন আগে পুরপ্রধান শহর লাগোয়া খেতিয়া স্টেশনের কাছে জমি দেখে এসেছিলেন।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডেই আবর্জনা ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন পুরপ্রধান। তিনি অবশ্য বলেন, “ধমক খেয়েছি। কিন্তু কোনও বেআইনি কাজ করিনি।”