কেতুগ্রামে সভায়। নিজস্ব চিত্র।
বছর দুই আগেও কেতুগ্রামে তৃণমূলে শেষ কথা ছিলেন দলের বীরভূম জেলা সভাপতি, গরু পাচার মামলায় জামিনে সদ্য ঘরে ফেরা অনুব্রত মণ্ডল। ররিবার সেই কেতুগ্রামে তৃণমূলের দু’টি বিজয়া সম্মিলনীর একটিতেও দলের নেতাদের বক্তৃতায় শোনা গেল না তাঁর নাম। জয়ধ্বনি উঠল দলীয় সমীকরণে অনুব্রতের ‘কট্টর বিরোধী’ বলে পরিচিত বীরভূম জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের নামে। তৃণমূল এখন তাঁকে কেতুগ্রামের দায়িত্ব দিয়েছে।
দুই বিজয়া সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন কাজলের দাদা, কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। হাজির ছিলেন ‘অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল। তবে তাঁর বক্তৃতাতেও শোনা যায়নি অনুব্রতের প্রশংসা। কাজল শেখকে ‘আগামী দিনের লড়াকু নেতা, গরিবের মসিহা, দলের রত্নের মতো নানা বিশেষণে ভূষিত করেন বক্তারা।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কান্দরায় সভায় ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় সভাটি হয় কাটোয়া-কেতুগ্রাম রোডে পাঁচুন্দি মোড়ে। সেখানে অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ছিলেন না। দুই সভাতেই অনুব্রত-অনুগামীদের দেখা যায়নি।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কয়েক জন তৃণমূল কর্মীর দাবি, “জোর করেই দলীয় কর্মীদের দু’টি সভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেষ্টদা না থাকলে সাহানেওয়াজকে কে চিনত? অসিত মালকেও কেষ্টদা তুলে এনে জিতিয়েছেন। তবে যতই চেষ্টা করুন না কেন, কেষ্টদার গড়ে কাজল দাঁড়াতে পারবেন না। বিজয়া সম্মিলনীতে কেষ্টদার নাম না করায় আমাদের খারাপ লেগেছে।” যদিও জোর করে সভায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নস্যাৎ করেছে সাহানেওয়াজ শিবির।
পাঁচুন্দির সভায় সাহানেওয়াজ বলেন, “আপনারা যাঁর নাম সব সময় শোনেন, তিনি, অর্থাৎ কাজল শেখ, আমার সহোদর। অত্যন্ত লড়াকু, গরিব দরদি, দুর্ধর্ষ নেতা। গোটা বীরভূমে জেলা ও কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোটের মানুষ, যুব সম্প্রদায়, মা, ভাই, বোনেরা তাঁকে এক ডাকে কাজল নামে চেনেন। কাজল মানুষের পাশে দাঁড়াতে জানেন, অন্যায়ের সঙ্গে লড়তে জানেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে অত্যন্ত ভালবাসেন বলেই বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি করেছেন।।”
অসিত বলেন, “কাজল এসে বীরভূম জেলায় দলকে সংগঠিত করেছেন, উন্নয়ন করেছেন।” আর কাজল বলেন, “কেতুগ্রামে আগে খুনোখুনি, রাহাজানি হত। ২০১১-র পরে কেতুগ্রামে হিংসা হয় না।
যদিও সভা থেকে ফেরার পথে টুম্পা দে, মুনমুন মাঝির মতো তৃণমূল কর্মীদের বলতে শোনা যায়, “বিজয়া সম্মেলনে কর্মীদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। এখানে নেতারা কর্মীদের প্রতি সেই সৌজন্যটুকু দেখাল না। শুধু রাজনীতির কথা বলে গেল।”