‘জুয়া খেলা’র আয়োজনের প্রচার চলছে সমাজমাধ্যমে। ছবি: ফেসবুক।
‘জুয়া খেলা’র আয়োজন করা হয়েছে শীতলা পুজো উপলক্ষে। তার ঢালাও প্রচারও চলছে সমাজমাধ্যমে। যাতে বহু মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেন! পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের এই ঘটনায় কার্যত বিস্মিত বিভিন্ন মহল। প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
জামালপুর থানার বেত্রাগড় গ্রামের মন্দিরে বুধবার থেকে শীতলা দেবীর পুজো শুরু হয়েছে। আগামী চার দিন এই পুজোয় মেতে থাকবে গোটা গ্রাম। ভক্তদের ঢল নামবে। মেলাও বসেছে। সেখানেই নাকি বসবে ‘জুয়ার আসর’! এই মর্মে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন সুরজিৎ দাস নামে এক যুবক। স্থানীয় সূত্রে খবর, জামালপুর থানার শুড়েকালনা গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক পেশায় লটারি টিকিট বিক্রেতা।
বুধবার সামাজিক মাধ্যমে শীতলা ঠাকুরের ছবি দিয়ে সুরজিৎ লিখেছেন, ‘‘আজ থেকে চার দিন বেত্রাগড়ে মায়ের তলায় জুয়া চলবে। সকল জুয়া খিলাড়িকে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’’ এতে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন জামালপুলের বাসিন্দারা। এই পুজো যাঁরা বংশপরম্পরায় করে আসছেন, সেই বংশের সন্তান পার্থ রায় বলেন, ‘‘শীতলা মায়ের পুজোয় জুয়ার আসর বসানোর স্পর্ধা দেখানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ আশপাশে লুকিয়ে কী করছে, জানি না। তবে শীতলা মায়ের তলায় চার দিন জুয়ার আসর বসবে বলে যিনি সমাজমাধ্যমে প্রচার করেছেন, তার শাস্তি হোক। এটাই আমি চাই।’’
এ নিয়ে সুরজিতের বক্তব্য, ‘‘আমি জুয়া খেলি না । জুয়া খেলা চালাইও না। তবে যারা জুয়া খেলা চালায়, তারা আমায় বলল, বুধবার থেকে শুরু করে চার দিন বেত্রাগড় শীতলা তলায় জুয়া খেলা চলবে। যারা জুয়া খেলা চালাবে, তাদের অনুরোধেই আমি আমার ফেসবুকে ওই পোস্ট দিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি, এটা করে আমি বড় অপরাধ করে ফেলেছি।’’
এ দিকে এমন ফেসবুক পোস্টের কথা জেনে স্তম্ভিত বর্ধমান সদর দক্ষিণের এসডিপিও অভিষেক মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমি খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অন্য দিকে, বর্ধমান আদালতের সিনিয়র আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, ‘‘সরকারি অনুমতি ছাড়া কেউ কোনও প্রকার জুয়া খেলা চালাতে পারে না। যদি চালায়, তবে সেটা আইনত অপরাধ বলেই বিবেচিত হবে। সমাজমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো আরও বড় অপরাধ। পুলিশ নিশ্চই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’’
এক তীব্র নিন্দা করেছে বিজেপি। জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘ভাল করে একটু খোঁজ নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, এমন বিজ্ঞাপনী প্রচারের পিছনে ‘খেলা হবে’ স্লোগানের অনুপ্রেরণাই কাজ করেছে।’’ যদিও বিজেপির এই বক্তব্যকে আমল না নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওই ব্যক্তি চরম অন্যায় কাজ করেছে। আমি চাই পুলিশ ওই ব্যক্তির বিরূদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’’