উন্নয়নের টাকার জন্য যেখানে হা পিত্যেশ করছে বহু পুরসভা, সেখানে আট বছর ধরে কয়েক কোটি টাকা পড়ে রয়েছে বর্ধমান পুরসভায়। অবশেষে কেন্দ্র সরকার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়ায় টনক নড়েছে পুর-কর্তাদের। শহরের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করার পরিকল্পনা শুরু করেছেন তাঁরা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জওহরলাল নেহরু রুরাল আরবান মিশন’-এর (জেএনআরইউএম) অন্তর্গত ‘সুসংহত ভাবে বাড়ি ও বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে’ (আইএইচএসডিপি) উন্নয়নের জন্য বর্ধমান পুরসভা ২০০৭ সালে চার কোটি পেয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা পড়েই ছিল অ্যাকাউন্টে। অবশেষে, কয়েক সপ্তাহ আগে কেন্দ্র সরকারের ওই প্রকল্পের আধিকারিকেরা চিঠি দিয়ে সুদ-সহ ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। তারপরেই নড়েচড়ে বসেন কর্তারা।
বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ডের অভিযোগ, সেই সময় সিপিএম ক্ষমতায় ছিল। তারা সেই টাকা বস্তি উন্নয়নে খরচ না করে তহবিলে ফেলে রেখেছিল। পরে সুদে আসলে টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা। তৃণমূলের বর্ধমান শহরের সভাপতি তথা চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (পূর্ত) খোকন দাসের অভিযোগ, “সিপিএম নিজেদের গরিবের বন্ধু বলে প্রচার করে, অথচ বস্তি উন্নয়নের টাকা ২০০৭ থেকে ২০১৩ অর্থ্যাৎ ৬ বছর ধরে তহবিলে টাকা ফেলে রেখেছিল। আমরা ওই টাকায় এ বার উন্নয়ন করব বলে পরিকল্পনা নিয়েছি।”
কিন্তু বস্তি উন্নয়নের টাকা পুরসভার তহবিলে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হল কেন? পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন করে বর্ধমান পুরসভা। সেই মতো ২০০৭ সালে প্রকল্পের অনুমোদন করে কেন্দ্র সরকার। প্রাথমিক ভাবে সিপিএম পরিচালিত পুরবোর্ড ১৬০০টি বাড়ি তৈরি, বস্তি এলাকায় বিদ্যুতের লাইন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করে। তারপরেই কাজ থমকে থায়। বর্ধমান পুরসভার সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনুল হক বলেন, “এই প্রকল্পে ধাপে ধাপে কাজ হয়েছে। ২০০৫ সালে যে বাজার ধরে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, ২০০৮-০৯ সালে সেই বাজার দর ৪০ শতাংশ থেকে ১২০ শতাংশ বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে পুরসভা নিজস্ব তহবিল থেকে ভর্তুকিও দিয়েছিল বস্তিবাসীদের জন্য। বাকি কাজ কী ভাবে করা হবে তার জন্য বারেবারে চিঠি দেওয়া হয়েছিল বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছে। একটি চিঠি দিয়ে কোনও পরামর্শ দেয়নি সরকার।” তাঁর প্রশ্ন, বর্ধমান পুরসভায় তৃণমূল প্রায় দু’বছর ক্ষমতায় এসেছে, তাঁরাও কেন ওই টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করছে না? খোকন দাসের জবাব, “আমরা উদ্যোগী হয়ে ২০১০ সালের পূর্ত দফতরের হিসাব মেনে কাজ করার অনুমতি সরকারের কাছে পেয়েছি। ঠিকাদাররাও ওই হিসাব মেনে কাজ করতে রাজি হয়েছে। আমরা এ বার দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করছি।” পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ওই টাকা দিয়ে শহরের বস্তি এলাকায় ১৯টি সেবাকেন্দ্র, ২২০টি কমিউনিটি শৌচাগার, নদর্মা তৈরি সহ নানা রকম উন্নয়ন মূলক কাজ করা হবে।