—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রায় পাঁচ বছর আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে গরমিলের কারণে রাজ্যের পাঁচটি জেলা থেকে ৪৪টি কাজের জন্য ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। তার মধ্যে রাজ্য সরকার ১ কোটি ৬১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। অভিযুক্ত পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক-সহ অন্য কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিয়েছে। গত মাসে কেন্দ্রের ১০০ দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার অদিতি সিংহ রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে চিঠি দিয়ে বকেয়া টাকা ফেরত চেয়েছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার সর্বশেষ রিপোর্টও দিতে বলা হয়েছে। নবান্নের দাবি, এ নিয়ে যথাযথ ভাবে কেন্দ্রকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যের পেশ করা খতিয়ান না মেলায় হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, দার্জিলিং, মালদাকে জরিমানা করেছিল কেন্দ্রের বিশেষ ‘অডিট’ দল। জরিমানা বাবদ রাজ্যকে ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলা আংশিক টাকা ফেরত দিয়েছে। তিনটে কাজের জন্য ৫৪.১২ লক্ষ টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার ২৫.০৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছে। আবার হুগলির কাছ থেকে প্রাপ্য ২ কোটি ৭১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে কেন্দ্রের দল ১২টি রাজ্যে একসঙ্গে ১০০ দিনের কাজ পরিদর্শন করে। তারা ফিরে গিয়ে বিশেষ ‘অডিট’ রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শশঙ্গা, রায়নার নতু, আউশগ্রামের রামনগর ও এড়ালের কাজ নিয়ে অসন্তোষ জানানো হয়। অনুমোদনহীন ভাবে অজয়ে বাঁধ, বৃক্ষরোপণের পরে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অন্য দফতরের সঙ্গে একসঙ্গে একাধিক কাজ হলেও সে সব কাজ ১০০ দিন প্রকল্প অনুমোদন করে না বলে জানানো হয়। শশঙ্গা পঞ্চায়েতকে ১৪ লক্ষ, এড়াল পঞ্চায়েতকে ৬০.৮২ লক্ষ ও রামনগর পঞ্চায়েতকে ১৩ লক্ষ টাকা ফেরত দিতেও বলা হয়। ২০২২ সালে ওই সব পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট কর্মী, প্রধানদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়েছিল রাজ্য সরকার।
হুগলির বলাগড়ের সোমরা ১ ও ২ পঞ্চায়েত, পোলবা-দাদপুর ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েতে, ধনিয়াখালি ব্লকের বেলমুড়িতে একাধিক কাজে অনিয়ম পেয়েছিল কেন্দ্রের পরিদর্শক দল। ওই সব কাজের টাকা ফেরত ও সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্র চিঠি দেয়। পঞ্চায়েতের কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, কাউকে বরখাস্ত করা হলেও সব টাকা আদায় হয়নি। হুগলি জেলা প্রশাসন রীতিমতো নোটিস দিয়ে পোলবা-দাদপুর ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের কাছ থেকে মোটা টাকা জরিমানা করে। দার্জিলিংয়ের মিরিকের বিজনবাড়িতে কংক্রিটের রাস্তা, বৃক্ষরোপণ নিয়েও পরিদর্শকেরা বেনিয়ম হয়েছে বলে জানান। সেখানেও পঞ্চায়েতের কর্মীকে সাসপেন্ড, বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। মালদার হাবিবপুর ও ইংলিশ বাজার ব্লকেও দুর্নীতি হয়েছিল বলে পরিদর্শকদের দাবি। কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, হুগলির সভাধিপতি রঞ্জন ধারারা বলেন, “প্রশাসন ও পঞ্চায়েত দফতর আলোচনা করছে। কিন্তু আমাদের ধারণা, রাজনৈতিক কারণে এ ধরনের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের টাকা আটকে কেন্দ্র বঞ্চিত করছে।” বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সন্দীপ নন্দী বলেন, “১০০ দিন প্রকল্পে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ হয়েছে, এটা সবাই জানে। গরমিলের টাকা ফেরত দিতে রাজ্য টালবাহানা করছে কেন?”