তৈরি হচ্ছে ক্যালেন্ডার। বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র
এক সময়ে নতুন বছর শুরুর আগে তাঁদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকত না। পুজোর পর থেকে কাজ শুরু হয়ে যেত। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাঠানো শুরু হয়ে যেত ক্যালেন্ডার। কিন্তু এখন আর সে রকম ব্যস্ততা নেই। দাম বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা কমার জেরে ক্যালেন্ডারের বাজারে মন্দা, দাবি বর্ধমানের ব্যবসায়ীদের।
বর্ধমান শহরের ময়ূরমহল এলাকার এক ছাপাখানার মালিক প্রবীর গোস্বামী জানান, বছর দশেক আগেও নতুন বছর শুরুর আগে ব্যস্ততা থাকত চরমে। প্রাকৃতিক দৃশ্য, দেবদেবীর ছবি বা বড়-বড় হরফে লেখা ঝাঁ চকচকে ক্যালেন্ডারের ভাল চাহিদা থাকত। কিন্তু ধীরে-ধীরে তা কমছে। প্রবীরবাবু জানান, এ বছর তিনি আগের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ বরাত পেয়েছেন।
শহরের অন্য জায়গাতেও ছবিটা একই রকম। আর এক ক্যালেন্ডার প্রস্তুতকারক রাজকুমার পণ্ডিতের দাবি, বছর দুয়েক আগে থেকেই চাহিদা কমে আসছিল। এ বার বাজার খুব খারাপ। আগে যেখানে দু’লক্ষ টাকার কাজ হত এ বার সেখানে ৫০ হাজার টাকারও হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। একই দাবি আর এক ব্যবসায়ী সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘৬, ৮ ও ১৫ টাকা— এই তিন দামের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছি আমরা। নতুন বছর এসে গেলেও বাজার খুব খারাপ। বড় বরাত আসেইনি।’’
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্কের ভল্টে হাত দিতেই বাজল ঘণ্টা, ছুট
কেন এমন পরিস্থিতি? বর্ধমানের ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মতোই দাম বেড়েছে ক্যালেন্ডারেরও। বর্ধমান টাউন হল পাড়ার ব্যবসায়ী শেখ মহম্মদ মুস্তাফার কথায়, ‘‘জিএসটি-র প্রভাবে রঙের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ। কাগজের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। তাই ক্যালেন্ডারের দামও বেড়েছে।’’ এ দিকে, মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমেও এখন ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা মিটে যায়। ফলে, অনেকেই আর আলাদা ভাবে ক্যালেন্ডার কেনার রাস্তায় হাঁটেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্যালেন্ডার উপহার দেওয়ার প্রথা থেকে সরে আসছে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।
সব মিলিয়ে, বছর শুরুর আগে হাসি উধাও ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ীদের মুখে।