—প্রতীকী চিত্র।
আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যকে বিশদ রিপোর্ট দিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। তদন্তে গতি আনতে সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য এবং টাকা তোলার নথিতে আদৌ সই জাল হয়েছে কি না দেখার জন্য বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হচ্ছে বলে বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাফিলতি ও প্রতারণায়’ টাকা উঠে গিয়েছে, বর্ধমান সিজেএম আদালতে শুক্রবার মামলা করেছে অভিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। সেখানে দুই আধিকারিক ও দু’জন কর্মীকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দায়ী করেছেন। সিজেএম চন্দা হাসমত ১৮ মার্চ এ বিষয়ে বর্ধমান থানাকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, ২০২২ সালের ১২ অগস্ট, ২৬ অগস্ট ও ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ স্থায়ী আমানত ভেঙে বর্ধমানের জেলখানা মোড়ের ওই ব্যাঙ্কের শাখা থেকে এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের কর্মী ভক্ত মণ্ডল-সহ দু’জনের নামে পুলিশে অভিযোগ করেন। ব্যাঙ্কের গাফিলতিও তুলে ধরা হয়। আরবিআইকে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, তাদের নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই ব্যাঙ্কের শাখা স্থায়ী আমানত ভেঙে অন্য এক জনের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে। যে নথির উপরে ভিত্তি করে ওই আমানত ভাঙানো হয়েছে, ব্যাঙ্কের সইয়ের সঙ্গে তা মেলার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রাজ্যপালের কাছে রিপোর্টেও অন্তর্বর্তী উপাচার্য গৌতম চন্দ্র সে কথাই লিখেছেন। সেখানে তিনি আরও জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী ৫ সদস্যের একটি তদন্তকারী দলের রিপোর্ট, গত ১০ বছর কোনও অন্তর্বর্তী অডিট হয়নি। সে কারণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে সল্টলেকের ক্যাম্প অফিসে নথি পরীক্ষা শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সই ও নথি জাল করে স্থায়ী আমানত ভেঙে টাকা তুলে নেওয়ার চিঠি পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সুপারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাফিলতি ও প্রতারণা’র দাবি তুলে চিঠি দেওয়া হয়। সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার মামলা দায়ের করা হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের কোনও গাফিলতি নেই বলেই তাঁরা প্রকৃত ঘটনা জানতে চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। তাঁদের কাছে যে সব নথি জমা পড়েছে, তাতে কোনও ভুল বা সন্দেহজনক কিছু ছিল না। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, ব্যাঙ্কের কাছে যে মোবাইল নম্বর রয়েছে, তাতে এসএমএস গিয়েছিল, তখন প্রশ্ন তোলা হয়নি কেন? বা প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে অ্যাকাউন্টের নথি (স্টেটমেন্ট) নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। তখনই বা চোখে পড়েনি কেন? ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের দাবি, “নিজেদের ভুল ধরা পড়ে যাওয়ায় দেড়-দু’বছর পরে আমানত ভাঙানো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন তুলছে। তা ছাড়া, গ্রাহক আমাদের কাছে লিখিত ভাবে কোনও অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে চাইলে স্থায়ী আমানত ভেঙে দিতে পারি।” যদিও অন্য ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের দাবি, আরবিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ী আমানত ভেঙে অন্য কারও অ্যাকাউন্টে নয়, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সেভিংস অ্যাকাউন্টেই টাকা দিতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, “ব্যাঙ্কের ওই সব প্রশ্ন তদন্তসাপেক্ষ। তবে ব্যাঙ্কের নথিতে রেজিস্ট্রারের পুরো সই ছিল। আর টাকা উঠেছে ছোট সইয়ে! ফিনান্স অফিসারের সইও মিলছে না। সই যেখানে মিলছে না, সেখানে টাকা উঠল কী ভাবে?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বর্ধমান থানার তদন্তকারীরাও। তাই তদন্তকারী দলে সাইবার বিশেষজ্ঞদের রাখা হয়েছে। সই জাল হয়েছে কি না, তা জানার জন্য বিশেষজ্ঞের মতামত চেয়েছে পুলিশ। ব্যাঙ্কের কাছে যাবতীয় নথি চেয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, বিভাগীয় তদন্তের পরে নথি পাঠাবে বলে ব্যাঙ্ক জানিয়েছে। এসএমএস সম্পর্কিত তথ্য জানা
গেলে তদন্তের অভিমুখও বোঝা যাবে বলে ধারণা।