বর্ধমানের এক সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের শস্যগোলায় শিল্পের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে পানাগড় শিল্পের ছোঁয়া পেলেও কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় নিজের বাসভবনে প্রয়াত হন ৮০ বছরের বুদ্ধবাবু। সাতের দশক থেকেই বর্ধমানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের দাবি, আল পথে হেঁটে যুব সংগঠন করেছেন। আবার কংগ্রেসের হাত থেকে বাঁচতে আল পথ ধরেই ছুটেছেন আদ্যোপান্ত বাঙালি বুদ্ধদেব।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বর্ধমানে এলেই সার্কিট হাউসে থাকতেন। ভালবাসতেন পোস্তর বড়া, ডাল, মৌরালা, পাবদা, ট্যাংরা মাছ। কোনও দিনও এসে মাংস খাননি, জানান সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী শেখ বাবুজান। পূর্ব বর্ধমানের জেলা নেতা অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একদম কাছ থেকে বুদ্ধদার নেতৃত্ব দেখেছি। এটা রাজনৈতিক জীবনে বিরাট প্রাপ্তি।’’ জেলা সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, বর্ধমানকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে হয়েছিল। শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন ছিলেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা ও বিধায়ক। তাঁদের দু’জনের ভাবনাতেই বর্ধমানের দু’দিকে উপনগরী গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যনগরীর পরিকল্পনা হয়। শহরের দু’দিকে বাসস্ট্যান্ড হয়। অবিভক্ত বর্ধমানের সেই সময়ের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “উল্লাসের মুখে প্রচুর গাছ ছিল। বুদ্ধদার খুব পছন্দ ছিল। বর্ধমানের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের বারবার কথা হয়েছে।।” সাতের দশকে বুদ্ধদেবের ‘সঙ্গী’ ছিলেন কাটোয়ার অচিন্ত্য মল্লিক। প্রাক্তন জেলা সম্পাদকের কথায়, “সম্ভবত ১৯৭৫ সালে ভাতারে বুদ্ধদার সঙ্গে সংগঠনের গোপন বৈঠক করছি। কংগ্রেসের লোকেরা আক্রমণ করতে আসছে, খবর পেয়ে বুদ্ধদা আলপথে ছুটে বড় রাস্তায় আসে। সেখান থেকে বাসে করে পালাতে পারে।’’
সম্পূর্ণ বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের নেতা হলেও প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “কাটোয়ায় শান্তি ফেরানোর জন্য বার বার ওঁর কাছে গিয়েছি। উনি আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে দলের চাপে সম্ভবত সবটা করতে পারেননি।” রাজনীতির বাইরে থেকেও প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন কাটোয়ার মুদ্রণ-ব্যবসার অন্যতম কর্ণধার নিমাই দত্ত ও বর্ধমানের চালকল ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা আব্দুল মালেক। তাঁরা মনে করেন, “এ রকম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিরল।” তৃণমূলের তরফেও বৈঠকে নীরবতা পালন করা হয়।
তবে অন্য অভিজ্ঞতাও রয়েছে বর্ধমানের। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর খণ্ডঘোষের একটি কলেজের মঞ্চে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে চেক তুলে দিতে দেখা গিয়েছিল কয়লা-মাফিয়া কালে সিংহকে। যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে সরকারে অভ্যন্তরে তো বটেই জেলা ও রাজ্য সিপিএমের অন্দরেও বিতর্ক দেখা দেয়। তবে কালের নিয়মে মুছে গিয়েছে সব বিতর্ক। শুভ্র কেশ, শুভ্র সাজে এখন বহু দূরের যাত্রী তিনি।