ব্রোকলি খেত ঢাকছেন চাষি, বর্ধমানের মিলিকপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
রোজই আকাশের মুখ ভার। সঙ্গে ঝিরঝিরে বা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। পুজোর আগে আবহাওয়ার এই চেহারায় চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে চাষিরা। কেউ পুজো মাথায় রেখে চাষ করা ফুলকপি, ব্রোকলির খেত নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারও ঘুম উড়িয়েছে ফাঁকা দোকান।
আড়াই মিলিমিটার অথবা তার বেশি বৃষ্টি হলে সেই দিনটিকে ‘বৃষ্টির দিন’ হিসাবে গণ্য করে কৃষি দফতর। কর্তাদের দাবি, এই বছর অন্য বারের তুলনায় বৃষ্টির দিন বেশি। লাগাতার বৃষ্টির জেরে রাস্তায় জল জমা থেকে, দোকান-বাজারে ভিড় না হওয়ার সমস্যাতেও ভুগতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই বাজার জমে যায়। বেশি ভিড় হয় সপ্তাহান্তে, ছুটির দিনে। তবে এই রবিবারে ফাঁকাই ছিল কালনা শহর, সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রাম, পূর্বস্থলী, পাটুলীর মতো বাজারগুলি।
কালনা শহরের বৈদ্যপুর মোড়ের একটি শপিংমলের তরফে আশিস হালদার বলেন, ‘‘২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে পুজোর বাজার করতে আসেন খরিদ্দারেরা। এ বার সেই সংখ্যা কম। শনি, রবিবার বিক্রি তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়। যাঁরা মোটরবাইকে যাতায়াত করেন তাঁরা বৃষ্টিতে বার হতেই পারেননি।’’ তাঁতিপাড়াতেও থাকে ব্যস্ততা। সুতো, শাড়ি শুকোতে চড়া রোদ প্রয়োজন হয়। পূর্বস্থলীর তাঁত শিল্পী মকাই শেখ জানান, বেশির ভাগ দিন বৃষ্টির ফলে কাপড় শুকোনো যাচ্ছে না। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় তাঁত যন্ত্র ঘোরাতেও সমস্যা হচ্ছে। দুর্যোগের ফলে বিভিন্ন তাঁত হাটে শাড়ি নিয়ে পৌঁছনো যাচ্ছে না বলেও দাবি তাঁদের।
রোদ না থাকায় বিপাকে প্রতিমা শিল্পীরাও। বিশ্বকর্মা পুজো পার করে জোরকদমে কাজ চলছে সেখানে। অথচ প্রতিমার মাটি, রং শুকোতে হিমসিম দশা শিল্পীদের। কালনার প্রতিমা শিল্পী গোপাল পাল বলেন, ‘‘মাসখানেক ধরে সে ভাবে রোদ নেই। আলো জ্বালিয়ে প্রতিমা শুকনোর চেষ্টা চলছে।’’
দফায় দফায় বৃষ্টি আমন ধানে চাষে উপকারী হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে আনাজ চাষিদের। পূর্বস্থলীর আনাজ চাষিদের দাবি, পুজোর বাজারের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, গাজর চাষ করেন তাঁরা। এ বার আনাজের চারাই তৈরি করা যায়নি। চাষি সইফুদ্দিন শেখের কথায়, ‘‘পুজোর বাজারের কথা ছেড়েই দিয়েছি। প্রতিদিন যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মাঠে থাকা আনাজই বাঁচাতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।’’
চাষিদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, মেনে নিয়েছেন কৃষিকর্তারা। কালনা মহকুমা কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘আনাজ চারা তৈরি করতে গেলে কিছুটা শুকনো আবহাওয়ার দরকার হয়। এ বার চাষিরা তা পাচ্ছেন না। নিয়মিত নজর রাখতে হবে জমিতে। ছত্রাকনাশক দিতে হবে।’’