স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি গঙ্গাজল দিয়ে ধোয়া হচ্ছে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক ‘দড়ি টানাটানি’ বন্ধ হচ্ছেই না। মঙ্গলবারের পরে বুধবার নতুন করে মাল্যদান করা হল মূর্তিতে। শুধু তাই নয়। মালা পরানোর আগে গঙ্গাজল ঢালা হল স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে। সৌজন্যে বিজেপি। দুর্গাপুরের ঘটনা।
এ ধরনের রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিগণও। রাস্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক কলিমুল হক বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ সবার। তিনি কোনও দল বা ব্যক্তির নন। তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধেয়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে দৃষ্টিকটূ এমন কিছু করা উচিত নয়।’’
মঙ্গলবার দুর্গাপুরের বাঁকুড়া মোড়ে বর্ধমান সেচখালের পাশে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির উদ্বোধন করেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। উপস্থিত ছিলেন এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি, দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল, পুরসভার কাউন্সিলরেরা। এ ছাড়া, ছিলেন এসবিএসটিসির আধিকারিকেরা। এসবিএসটিসিই ওই মূর্তি তৈরির খরচ জুগিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া স্থানীয় ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিজেপি কর্মীরা গিয়ে উদ্বোধনের সময়ে মূর্তির গলায় পরানো মালা, পদতলে দেওয়া ফুল, সব ফেলে পরিষ্কার করেন। এর পরে গঙ্গাজল দিয়ে মূর্তি ধোয়া হয়। পরে মূর্তিতে মাল্যদান করেন বিজেপির ৩ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি তাপস নায়েক। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন চন্দ্রশেখরবাবুও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখরবাবুর উদ্যোগে বছরখানেক আগে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। নতুন সেতু নির্মাণের পরে সেখানে সৌন্দর্যায়নের জন্য এসবিএসটিসির প্রয়াত চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষের কাছে দরবার করেন তিনি। তমোনাশবাবু যোগাযোগ করেন প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত সেতুর সৌন্দর্যায়ন ও স্বামীজির মূর্তি স্থাপনের জন্য পরিবহণ দফতর প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। সেই অর্থে গলওয়ানের স্মৃতিতে স্মারক, জেলার সবচেয়ে উঁচু একশো ফুট জাতীয় পতাকা বসানো হয়। স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি স্থাপনও করা হয়। প্রায় এক বছর ধরে ‘অযত্নে’ পড়ে থাকার পরে মঙ্গলবার মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন মলয়বাবু।
ফের মাল্যদান করা হল কেন? বুধবার সকালে চন্দ্রশেখরবাবু সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তিনি তৃণমূল ত্যাগ করলেও এখনও এলাকার কাউন্সিলর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর নিমন্ত্রণ ছিল না। সুতরাং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ দিন আলাদা করে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সেই মতো কাজ করা হয়েছে। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের অসৌজন্যের রাজনীতির নিন্দা করছি। এটা তৃণমূলের বরাবরের রীতি। আমার উদ্যোগেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা হল। অথচ, আমাকেই ডাকা হল না।’’ গঙ্গাজল দিয়ে ধোয়ার যুক্তি কী? চন্দ্রশেখরবাবুর জবাব, ‘‘যাঁরা মূর্তির উদ্বোধন করেছেন তাঁদের হাত অশুদ্ধ। কারণ, তাঁদের হাতে লালা-এনামুলের দাগ লেগে আছে। তাই আমরা গঙ্গাজল দিয়ে মূর্তি শুদ্ধ করে স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা জানালাম।’’
এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূলের অন্যতম জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করছেন, মানুষ তাঁদের ছুড়ে ফেলে দেবে। যত রাজ্যের কয়লা মাফিয়া, দুষ্কৃতীরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। বিজেপির সভায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পকেটমাররা। বিধানসভা নির্বাচনে সব ফল পাবে।’’