ফরিদপুরের গোগলা এলাকায় তৃণমূলের মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে মোটরবাইক মিছিল করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে শ’দুয়েক মোটরবাইকের একটি মিছিল নানা এলাকায় ঘুরে প্রচার করে বলে অভিযোগ সিপিএমের। নির্বাচন কমিশনের কাছেও এই অভিযোগ জানিয়েছে তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে তৃণমূল প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারি দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে প্রচারে আসেন। গোগলা পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ঘোরেন তিনি। বনগ্রাম থেকে প্রচার শুরু হয়। বাসিন্দারা জানান, সামনে একটি ম্যাটাডরে ছিলেন প্রার্থী। পিছনে মোটরবাইকের লম্বা মিছিল। সেগুলিতে তৃণমূলের পতাকা ছিল। গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান সেই মোটরবাইক মিছিল দেখতে। মিছিলটি বনগ্রাম থেকে শুরু হয়ে মাদারবনি কোলিয়ারি, পলাশবন, চন্দেরডাঙা ইত্যাদি গ্রাম পরিক্রমা করে। যদিও এ ভাবে মোটরবাইক মিছিল করা যায় কি না সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। পাণ্ডবেশ্বরের সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ভাবে মোটরবাইক মিছিল করা বেআইনি। এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতেই এমন মিছিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা অভিযোগ করেছি।’’
সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার আগে এই ব্লক দুর্গাপুর ১ নম্বর বিধানসভার অন্তর্গত ছিল। প্রথম বার ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হন সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি হারিয়ে দেন তৃণমূলের জাহির আলমকে। সিপিএম পায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট। তবে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের চন্দেরডাঙা, নস্করবাঁধ, মাধাইপুর ইত্যাদি গ্রামে তৃণমূলের প্রভাব নজরে এসেছে বারবার। এমনকী, এই সব গ্রামে তৃণমূলের মদতে বোমা তৈরি হচ্ছে বলে বিধানসভায় অভিযোগ এনেছিলেন গৌরাঙ্গবাবু। পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে জিততে মরিয়া তৃণমূল এ বার প্রার্থী করেছে আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে। প্রথম দিন থেকেই জোরদার প্রচার শুরু করেছেন তিনি।
রবিবার বিনা অনুমতিতে মোটরবাইক মিছিলের কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছে তৃণমূল। দলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় জানান, মোটরবাইক মিছিল করার জন্য কোনও অনুমতি দলের তরফে নেওয়া হয়নি। তবে তিনি একে মোটরবাইক মিছিল বলতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের তরফে কোনও মোটরবাইক মিছিল করা হয়নি। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মোটরবাইক নিয়ে মিছিলে যোগ দেন। আমরা সবাইকে আটকাতে পারিনি।’’ প্রার্থী জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, তাঁদের দল কোনও বেআইনি কাজকর্ম সমর্থন করে না। এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে ঠিক জায়গায় উপযুক্ত তথ্য দেবেন বলে জানান তিনি।
দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরেই ওই মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দিই সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে। এ ব্যাপারে রিপোর্টও চেয়েছি।’’