উচিতপুরে কড়া টক্কর সিপিএমের

পঞ্চায়েত ভোটে জেলার বহু এলাকাতেই যখন তারা লড়াইয়ে নেই, সেই সময়ে রায়না ১ ব্লকের উচিতপুর গ্রামে সিপিএমের উপস্থিতি এমনই জোরাল। তৃণমূলের দেওয়াল লিখন, ব্যানার-পোস্টার রয়েছে, তবে তা তুলনায় বেশ কম।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

রায়না শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০১:৪৫
Share:

গ্রামের পথে। নিজস্ব চিত্র

দামোদরের কারালাঘাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পিচ রাস্তার বাঁ দিক থেকে চলে গিয়েছে মোরাম রাস্তা। তার উপরেই বাঁশে উঁচু করে টাঙানো বেশ কয়েকটি লাল পতাকা। মোরাম রাস্তা থেকে গ্রামের দিকে এগোলেই পরপর দেখা যায় লাল পতাকা। গ্রামের ভিতরে দেওয়ালে, পোস্টারে সিপিএমের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আর্জি।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটে জেলার বহু এলাকাতেই যখন তারা লড়াইয়ে নেই, সেই সময়ে রায়না ১ ব্লকের উচিতপুর গ্রামে সিপিএমের উপস্থিতি এমনই জোরাল। তৃণমূলের দেওয়াল লিখন, ব্যানার-পোস্টার রয়েছে, তবে তা তুলনায় বেশ কম। গ্রামে কার্যত একঘরে হয়ে রয়েছেন, অভিযোগ তৃণমূল প্রার্থী উৎপল মালিকেরই। বছরখানেক ধরে সরকারি গভীর নলকূপের জল জমিতে না পৌঁছনোয় চাষাবাদ করতে পারেননি বলে তাঁর পরিবার ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করেছে।

রাজ্যে পালাবদলের পরে সাত বছরে জেলার নানা প্রান্তে সিপিএমের শক্তি ক্রমশ কমলেও, উচিতপুর যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে বেঁচে রয়েছে, দাবি দলের নেতা-কর্মীদের। বছর দুয়েক আগে গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মালিক ব্লক সদর শ্যামসুন্দরে খাদ্য আন্দোলন করতে গিয়ে বোমার আঘাতে মারা যান। অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের দিকে। ওই ঘটনার পরে উচিতপুরের সিপিএমের লোকজনের বিরুদ্ধে পাল্টা তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

গ্রামে ভোটার হাজার দে়ড়েক। রাজ্যে পালাবদলের সময়েও সিপিএম এই গ্রামে ৬৪৫ ভোটে এগিয়ে ছিল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে তা বেড়ে দাঁড়িয় প্রায় ৮৫০। ২০১৪-র লোকসভা ও ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেও তা ধরে রেখেছিল তারা। রায়না ব্লকের অধীনে হলেও এলাকাটি প়ড়ে জামালপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। সেখানকার বাম বিধায়ক সমর হাজরা দাবি করেন, “উচিতপুরে তৃণমূল দাঁত ফোটাতে পারবে না। দখলদারি করতে গেলে বড় প্রতিরোধের মুখে পড়বে।” সিপিএমের রায়না ১ এরিয়া কমিটির সদস্য বিষ্ণুপদ সাঁতরার অভিযোগ, “গত বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল রাতে কয়েকশো গাড়ি নিয়ে গ্রাম দখল করতে এসেছিল। খবর পেয়ে রাস্তার ধারে তির-বল্লম নিয়ে জমিতে অপেক্ষা করছিলেন গ্রামের লোকজন। আর রাস্তার ধারে বঁটি-দা নিয়ে মহিলারা দাঁড়িয়েছিলেন। গাড়ি থেকে নামার সাহস পায়নি ওরা।”

তৃণমূল প্রার্থী উৎপল মালিকের অভিযোগ, “গ্রামের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে রেখেছে সিপিএম। সে জন্য কেউ আমাদের দিকে আসার সাহস পাচ্ছে না। পতাকা টাঙালেও ছিঁড়ে দিচ্ছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না।” গ্রামের তৃণমূল নেতা পীযূষ যশের দাবি, “আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। পুলিশও সিপিএমের লোকেদের ভয়ে গ্রামে ঢুকতে পারছে না।”

ভয় দেখানোর অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএম নেতাদের দাবি, গ্রামে তফসিলি জাতি-জনজাতির ৪০৬টি পরিবার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই খেতমজুর। বাকি ৭২টি সাধারণ পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। তাঁদের অধিকাংশ এখনও বামেদের উপরেই ভরসা রাখেন বলে নেতাদের দাবি।

সিপিএম প্রার্থী পুষ্প মাজিল্যা বা চিত্রা ধারাদের বক্তব্য, “আমরা তৃণমূলের প্রচারে কোনও বাধা দিইনি। আর তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁর বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত গ্রামের ষোলো আনা কমিটি নিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement