অর্ধেকের বেশিতে জয় এখনই

মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সূত্রে যে হিসেব মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৫৩ শতাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি! পঞ্চায়েত সমিতির ৫২ শতাংশ আসনেও ভোট হবে না। অথচ ২০১৩ সালে অবিভক্ত বর্ধমানে তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬ শতাংশ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৯ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৫
Share:

অবিভক্ত বর্ধমানকে হারিয়ে দিল নতুন জেলা পূর্ব বর্ধমান। অন্তত পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বেই শাসকদলের ‘সাফল্য’-এর নিরিখে।

Advertisement

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবিভক্ত বর্ধমানে যত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল রাজ্যের শাসকদল, তার চেয়ে এ বার পূর্ব বর্ধমানে অনেক বেশি আসনে নিষ্কন্টক জয় পেয়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সূত্রে যে হিসেব মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৫৩ শতাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি! পঞ্চায়েত সমিতির ৫২ শতাংশ আসনেও ভোট হবে না। অথচ ২০১৩ সালে অবিভক্ত বর্ধমানে তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬ শতাংশ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৯ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল।

জেলা প্রশাসনের হিসেবে, গত বার অবিভক্ত বর্ধমানে ৪০৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৮০৯টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। এ বার পূর্ব বর্ধমানে ৩২৩৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে নির্বাচনের আগেই শাসক দল ১৭১৯টি আসনে জিতে গিয়েছে। তেমনই পঞ্চায়েত সমিতির ৬২৮টি আসনের মধ্যে ৩২১টি আসনে বিরোধী প্রার্থী না থাকায় কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। গতবার বিরোধীরা অনেক বেশি মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ফলে, পঞ্চায়েত সমিতির ৭৭৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল বিনা যুদ্ধে জিতেছিল ১২৬টিতে। জেলা পরিষদেরও সব আসনে গতবার বিরোধীরা প্রার্থী দিয়েছিল। এ বার পূ র্ব বর্ধমানের ৫৮টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে বিরোধী
প্রার্থী নেই।

Advertisement

এ বার শাসকদলের এ হেন ফলের কারণ কী?

২০১৩-য় জেলার প্রতিটি ব্লকেই বিক্ষুব্ধেরা মাথা চাড়া দিয়েছিল। সে জন্য সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেসের প্রার্থী না থাকলেও অনেক জায়গায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য দলেরই গোঁজ প্রার্থীর (নির্দল) তৃণমূল প্রার্থীর লড়াই হয়েছিল। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এ বার ভোটের অনেক আগে থেকে রাশ টানায় গোঁজ প্রার্থীর সংখ্যা কম। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য নির্দল হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা অনেকেই ব্লক বা মহকুমাশাসক দফতরে ‘পাহারাদার’-দের সৌজন্যে মনোনয়ন দিতে পারেননি। এত কিছুর পরেও পরিসংখ্যান বলছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩২৩৪ আসনে তৃণমূলই প্রার্থী দিয়েছে ৪৭১৫! এই তথ্য নিঃসন্দেহে ভাবাচ্ছে দলীয় নেতৃত্বকে।

এ ছাড়াও গত পঞ্চায়েত ভোটে মূলত কাটোয়ায় তৃণমূলের ‘কাঁটা’ ছিল কংগ্রেস। সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ থাকায় গতবার তৃণমূল অনেক আসনে প্রার্থী দেয়নি। এ বার সেই ‘ঝামেলা’ নেই। স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই তল্লাটে কংগ্রেসের সংগঠন তলানিতে ঠেকেছে। কাটোয়া মহকুমার ৫টি ব্লকের ৫৩৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে বিরোধীরা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩টিতে!

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিটি ব্লকে এক জন করে শহরের নেতাকে ‘পর্যবেক্ষক’ করে দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ওই পর্যবেক্ষকরাই দলের নির্দেশ মেনে পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ফের প্রার্থী করেছেন। সংরক্ষিত আসন বা হেরে থাকা আসনগুলিতে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করায়, তৃণমূলের অন্দরে প্রার্থী নিয়ে চরম কোন্দল দেখা দেয়নি। বরং অনেকটাই ‘ঐক্যবদ্ধ’ ছবি তুলে ধরে বিরোধীদের আটকানোর জন্য ব্লক বা মহকুমাশাসক দফতরে লাঠি হাতে ‘নজরদারি’ চালিয়েছে শাসকদল। দলের অনেক নেতাই ঘনিষ্ঠমহলে মেনে নিয়েছেন, টানা এক সপ্তাহ রাস্তায় লাঠি হাতে ‘পাহারা’ দেওয়ার জন্যেই অর্ধেকের বেশি পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিরোধীদের পা পড়েনি।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলছেন, “বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারলে আমরা কী করব? আমরা তো কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দিইনি!” যা শুনে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারের মন্তব্য, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কী হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। কাজেই শাক দিয়ে মাছ ঢেকে লাভ হবে না। গত বছর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেক ভাল থাকায় অনেক বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়া গিয়েছিল।” বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর কথায়, “আমরা তো প্রার্থী দিতে পারব কি না, তা নিয়েই সংশয়ে ছিলাম। অনেক লড়াইয়ের পরে মনোনয়ন জমা করতে পেরেছি—এটাই অনেক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement