আসানসোলে মহকুমাশাসকের অফিসের কাছে ধরপাকড়। নিজস্ব চিত্র
মনোনয়ন জমা দিতে অফিসে ঢোকার আগে অচেনা লোকজনের প্রস্তাব শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। হাসি মুখে প্রস্তাব এসেছিল— ‘আগে একটু ঠান্ডা লস্যি খেয়ে নিন, তার পরে মনোনয় জমা দেবেন।’ তার পরেই জামা ধরে টেনে, চড়থাপ্পড় মেরে এলাকাছাড়া করা হয়েছে তাদের প্রার্থীদের, আসানসোলে অভিযোগ করল বিরোধীরা।
সোমবার আসানসোলে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বেলা গড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গে উত্তেজনার পারদ চড়ে। দফায়-দফায় গোলমাল বেধে যায়। পুলিশকে বেশ কয়েক বার লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতেও দেখা যায়। তৃণমূল অবশ্য কাউকে কোনও বাধা দেওয়ার কথা মানতে চায়নি।
বিরোধীদের অভিযোগ, এ দিন ভোর থেকেই মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে ১৪৪ ধারা অমান্য করে তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী জড়ো হন। ছিলেন আসানসোলের কিছু তৃণমূল কাউন্সিলর ও মেয়র পারিষদও। সকাল ১১টা নাগাদ একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে অফিস চত্বরে ঢুকে পড়ে। মনোনয়ন জমা দিতে আসা বিরোধী প্রার্থীদের বাধা দেওয়া হয়। তার পরে লস্যি খাওয়ানোর নাম করে এলাকাছাড়া করা শুরু হয় বলে অভিযোগ।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির দুই কংগ্রেস প্রার্থী, বারাবনির দুই বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে আসেন। অভিযোগ, মহকুমাশাসকের দফতরে ঢোকার আগেই শাসকদলের কর্মীরা তাঁদের মারধর করে হটিয়ে দেয়। এর কিছু পরে আবার সালানপুর, বারাবনি, জামুড়িয়া থেকে সিপিএমের লোকজন মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময়ে রবীন্দ্রভবনের কাছে রাস্তা আটকানো হয়। সিপিএমের অভিযোগ, চড়-থাপ্পড় মেরে, গালিগালাজ করে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নেতা-কর্মীদের।
দুপুর ১২টা নাগাদ আসানসোল আদালতের নতুন ভবন চত্বরে প্রার্থীদের নিয়ে জড়ো হন বিজেপি নেতৃত্ব। সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। অভিযোগ, খবর পাওয়া মাত্র তৃণমূল কর্মীরা সেখানে চড়াও হয়ে মারধর করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সাড়ে ১২টা নাগাদ এক বিরোধী প্রার্থীকে তাড়া করলে তিনি আইনজীবীদের সেরেস্তায় ঢুকে পড়েন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে গোলমালে জড়ান আইনজীবীদের একাংশ।
এ ভাবে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় এডিসিপিও (সেন্ট্রাল) সায়ক দাসের নেতৃত্বে পুলিশের বড় বাহিনী লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে জমায়েত হওয়া লোকজনকে সরিয়ে দেয়। কী ভাবে এই চত্বরে এত লোক জড়ো হল, সে প্রশ্নে এডিসিপিও বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্রার্থীদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। নৈরাজ্য চলছে।’’ বিজেপি নেতা তাপস রায়েরও অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন কেন্দ্র পর্যন্ত যেতেই দেওয়া হয়নি।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়ন পর্ব মিটেছে। বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পেরে আমাদের নামে কুৎসা করছেন।’’