৫৮ বছর আগের দাবি মিটতে চলেছে পূর্ব বর্ধমানের মানুষের। শুক্রবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বর্ধমান থানা ভেঙে তিনটে থানা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন থানা দু’টি হল— শক্তিগড় এবং দেওয়ানদিঘি।’’
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে শক্তিগড়ে ফাঁড়ি রয়েছে। গত ২৯ জুন প্রশাসনিক সভায় জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, শক্তিগড়ে কি থানা হয়েছে? পুলিশ সুপার জানান, সেখানে থানা গড়ার প্রস্তাব রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সে দিনই শক্তিগড়কে থানা করায় উৎসাহ দেখান। শক্তিগড়ের সঙ্গে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ধারে দেওয়ানদিঘিতেও থানা হবে বলে ঘোষণা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “এই সিদ্ধান্তে জনতা, পুলিশ-প্রশাসনের সুবিধা হবে।”
১৯৫৯ সালের মাঝামাঝি রাজ্য সরকারের কাছে বর্ধমান থানা ভাগ করার প্রস্তাব প্রথম বার পাঠায় জেলা প্রশাসন। রাজ্যে কংগ্রেস এবং বাম সরকারের আমলে সে কাজ এগোয়নি। বছরখানেক আগে ওই প্রস্তাবটি নতুন করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠান বর্তমান পুলিশ সুপার।
জেলা পুলিশের দাবি, বর্ধমান থানা এলাকার আওতায় থাকা প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিরবিচ্ছিন্ন নজরে রাখা তাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। দু’টি ব্লকের দুশোর বেশি গ্রাম এবং ৩৫টি ওয়ার্ডের বর্ধমান পুরসভা এই থানার অন্তর্গত। প্রায় সাত লক্ষ মানুষের বাস।
পুলিশের দাবি, লোকসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন অপরাধ বাড়ছে, ট্র্যাফিক-সমস্যা বাড়ছে। শক্তিগড় এলাকায় দু্র্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। পক্ষান্তরে, ২০১২ সালে সিপিএম নেতা প্রদীপ তা ও কমল গায়েন খুনের পরে দেওয়ানদিঘিতে থানার দাবি জোরালো হয়। পূর্ব বর্ধমানের একমাত্র শিল্পতালুক হিসেবেও দেওয়ানদিঘির পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন প্রস্তাবে বর্ধমান পুর-এলাকা নিয়ে থাকবে সাবেক বর্ধমান থানা। বর্ধমান ১ ব্লকের বাঘার ১, বাঘার ২, বেলকাশ, বন্ডুল ১, খেতিয়া, কুরমুন ১, রায়ান ১ ও ২, সরাইটিকর পঞ্চায়েত যেতে পারে দেওয়ানদিঘি থানায়। আর শক্তিগড় থানার
মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কুরমুন ২, বন্ডুল ২, বৈকুন্ঠপুর ১ ও ২, বড়শূল ১ ও ২ এবং গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের।
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “৫৮ বছর আগের দাবি আমাদের সরকার মিটিয়ে দিল। এতে মানুষের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে, অপরাধও কমবে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তাপস সরকার বলেন, “কী হবে সেটাই দেখার।”