দেউলের মাথায় জমে আগাছা। নিজস্ব চিত্র।
শীত পড়তে শুরু হয়েছে ঘোরাঘুরি। এমন দিনে ভিড় জমে কাঁকসার দেউল এলাকায়। অজয় নদের পাশে ইছাই ঘোষের দেউল পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছে। সেই দেউলের চূড়োর দখল নিয়েছে আগাছা। এটি দেউলের সৌন্দর্য নষ্ট করছে বলে দাবি পর্যটক থেকে এলাকাবাসীর। দেউলটি পরিষ্কারের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
কথিত আছে, গোপরাজা ইছাই ঘোষের রাজত্ব ছিল অজয় নদের পাড় সংলগ্ন গড় এলাকা। যা গড়জঙ্গল নামেও পরিচিত। এই গড়ে অজয় নদের পাড় ঘেঁষে রয়েছে সুউচ্চ দেউলটি। বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদের তরফে দেউলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। দেউলের আশপাশে তৈরি হয় পার্ক। রয়েছে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থাও। ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করে বনকাটি পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর গ্রামে থাকা দেউল। মরসুমে অজয় পাড়ে পিকনিকের রমরমা তো রয়েছে। কিন্তু, এখানকার মূল আকর্ষণ ইছাই ঘোষের দেউল। ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে এই অংশটি সংরক্ষিত করা হয়েছে। তার বোর্ড লাগানো রয়েছে। এটি মধ্য অষ্টাদশ শতকের তৈরি বলে ধরা হলেও এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গবেষকদের মতে, এটি আরও প্রাচীন। কারণ ইছাই ঘোষের রাজত্বকাল তারও আগে। দেউলকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে।
দেউলটির উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। পুরোটাই ইটের তৈরি। সুউচ্চ দেউলে কোনও বিগ্রহ নেই। সামনের দিকে রয়েছে তিনটি মূর্তি। সেগুলি এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে। তবে দেউলের মাথায় বেড়ে উঠছে আগাছা। জন্ম নিয়েছে বট, অশ্বত্থর মতো গাছও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী প্রণব ভট্টাচার্য জানান, দেউল এলাকার পরিচিতি অনেকটাই বাড়িয়েছে। দূর থেকে বহু মানুষ দেউল দেখতে আসেন। সেখানে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। আর এক বাসিন্দা রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গড় জঙ্গল এলাকা লক্ষণ সেন, ইছাই ঘোষের মতো রাজাদের ইতিহাস বহন করে চলেছে। দেউল তার অন্যতম নিদর্শন। এলাকার ইতিহাসকে বাঁচাতে হলে দেউলের পরিচর্যা দরকার।’’
বছরের বিভিন্ন সময়ে দেউল দেখতে আসেন দুর্গাপুরের তুহিন রায়, মনোজিৎ ভট্টাচার্যেরা। তাঁদের মতে, ‘‘দেউলের চূড়ায় যে ভাবে আগাছা জন্মেছে তাতে ক্ষতি হতে পারে।’’ ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যেই দেউল সংস্কারের কাজ হয়। ফের সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।